Poem

আসমানে শারদীয় চাঁদ

শামসুর রাহমান

কারো সাতেপাঁচে নাক গলাবার প্রবণতা
আদপে গায়েব ছিলো। নিজের মামুলি
গণ্ডির ভেতরে বিচরণে
কাটিয়েছি দিন, মাস এবং বছর।
যদিও নিজেকে মাঝে মাঝে
ভাসিয়ে দিয়েছি মেঘে এবং উড়েছি
বিচিত্র রঙের পাখিদের পেছনে এবং হাত
বাড়িয়ে ধরার ফাঁদ গড়তে চেয়েছি।

সাফল্য জোটেনি, তবু খেলার নেশায় প্রতিবার
পরাজয় মেনে নিয়ে আনন্দের গুঁড়ো
কুড়িয়েছি এদিক সেদিক। ঝকঝকে ভবিষ্যের
আশায় অনেক হেঁটে অন্ধকারে এবড়ো-খেবড়ো
কত পথে খেয়েছি কামড় ঢের পোকা-মাকড়ের;
তবুও জীইয়ে রেখে স্বপ্ন হাত দিয়েছি বাড়িয়ে।

কারা যে আমাকে আচানক এক কবন্ধ গুহায়
ঠেলে দিলো অমাবস্যা রাতে,
ঠাওর করার কোনো সুযোগ পাইনি
কিছুতেই। আঁধার যে এরকম ভীষণ ভঙ্গিতে
কামড়ে ধরতে পারে, ধারণা ছিলো না
কোনো দিন। অন্ধকার এ প্রকার হিংস্রতা পেয়েছে কোন দেশে?
মাংস ছিঁড়ে খাবে নাকি এই বিরানায়? হায়,
আমি কি অদৃশ্য হয়ে যাবো
সাততাড়াতাড়ি আঁধারের নিপীড়নে? অকস্মাৎ
ভয়ানক হাসির আওয়াজ
গুহাকে কাঁপিয়ে তোলে। কে জানে কোত্থেকে
এক অর্ধ মানব এবং অর্ধ পশু গুহায় লাফিয়ে পড়ে।
আমার শিরায় রক্তধারা তুষারের মতো জমে
আমাকে মৃত্যুর খুব কাছে অতি দ্রুত
নিয়ে যেতে থাকে। আমি প্রায় হাল ছেয়ে
চোখ বুজে ফেলি। কী-যে হলো, আচমকা
বিকট শব্দের এক ধমকে গুহায় পুরো মাথা উড়ে গিয়ে
জেগে ওঠে গুহার জ্বলজ্বলে আসমানে শারদীয় চাঁদ
অপরূপ হাসি তার ছড়িয়ে চৌদিকে
আমাকে অভিবাদন জানিয়ে প্রফুল্ল অতিশয়।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 146

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts