Poem

আসলে তা’ নয়

শামসুর রাহমান

ছিঃ। লোকটা কি আহাম্মকরে বাবা,
‘সোজা আঙুলে ঘি ওঠে না’ বাক্যটি সেই ছেলেবেলা থেকে
শুনে শুনেও পড়ন্ত বেলায়
তার কোনো আক্কেল হলো না। হিঃ হিঃ হিঃ।

ভেবেছিলো, সবকিছুই চলে সরল রেখায়; আসলে যে তা’ নয়, এটা বুঝতে বুঝতে
ওর জীবন এলিয়ে পড়েছে
গোধূলি আকাশে। কিন্তু, বুঝলে কি হবে?
এই এখনো পথে বেরুলে সে চমকে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে,
ভড়কে যায়। কী মুশকিল, ডান দিকের রাস্তা সবাইকে
ভানুমতির খেল দেখিয়ে বাঁ, দিকে
মোড় নেয়, বাঁ দিকের পথ সাপের মতো
এঁকে বেঁকে ডানে মিশে যায়। ব্যাপারটা এরকম,
এদিক-ওদিক এবং ওদিক-সেদিকে
জড়িয়ে যেতে থাকে, যেন মাতালের প্রলাপ।

ঢাকঢোল পিটিয়ে জানানো হলো-
কাল বিকালে এক বিরাট
জমায়েত রাজধানীতে। বাচাল মাইক্রোফোন দশদিক কাঁপিয়ে
রটিয়ে গেলো, ‘দলে দলে যোগ দিন’। তা ধিন তা’ ধিন।

সেই থেকে মধ্যবয়সী লোকটা
ভাবতে শুরু করলো, দ্রোপদীর শাড়ি। এক ফোঁটে
ঘুম হলো না রাতে। চোখ থেকে অবিরল
পানি গড়িয়ে পুড়ে দু’ গালে।

সারাটা দিন কাটে কাজ-থামানো
অস্থিরতা আর দপদপে উদ্দীপনায়। বিকেল হ’তেই
রত্ত্বয়ানা হয় জমায়েতের উদ্দেশে।
অবাক কান্ড, যেখানে হাজার হাজার লোক
জড়ো হবার কথা, সেখানে শূন্যতা
গেঁয়ো মোড়লের মতো পায়ের ওপর তুলে
হুকো টানছে
আর বেশ দূরে দাঁড়িয়ে কিছু লোক
হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে, যেন মস্ত তামাশা
চলছে একটা। সেই ভিড়ে
ওর মিত্রদের দেখতে পেয়ে লোকটায়
পিলে যায় চমকে; বজের মতো হাঁক দিতে গিয়ে
তার মনে হলো, খুবই মিহি গলার
আহত এক পাখি ভর করেছে কণ্ঠে, সে
নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে থাকে
এবং চতুর্দিকে হিঃ। হিঃ। হিঃ।

ছিঃ লোকটা কী আহাম্মকরে বাবা।
ভেবেছিলো, দেশটার
চোখ গেছে খুলে, চুয়ান্ন হাজার বর্গ মাইল এখন
গনগনে লোহা। এবার
সত্যি সত্যি হবে লড়াই।
এখন সে ডন কিহোতের মতো একাই লড়ুক
উইন্ডমিলের সঙ্গে। ছিঃ। কী বুরবকরে বাবা,
হিঃ। হিঃ। হিঃ!

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 104

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts