Poem

ব্যাজস্তুতি

শামসুর রাহমান

একবার যে শোনে প্রকৃত গান, ভেসে যায় সুরে
সুরে দূর থেকে দূরে, তার জন্যে নয় স্বাভাবিক
জীবন যাপন আর কোথাও বেসুরো কিছু শোনা
দুঃসহ যন্ত্রণাময়, ভীষণ বেখাপ্পা লাগে সব।

সে কবে ছেড়েছি ঘর সুরের অমিত আকর্ষণে,
বর্ষণে অথবা খরতাপে, শীতে ও বসন্তে ঘুরে
ঘুরে বেলা গেছে, আনন্দে বিষাদে পৌঁছে গেছি ঠিক
প্রায় অস্ত গোধূলিতে, তবু কেন ব্যাকুলতা যাপি?

শুধু শোনা নয়, সুর সৃজনের দায় নিয়ে স্তব
করেছি অদৃশ্য আর অশ্রুতের; রহস্যের ঝাঁপি
খুলে লহমায় সর্পমণি দেখে নিয়ে তপোবনে
হেঁটে গেছি একা-একা, মরুধূলি মেখেছি আত্মায়।

এই পথে পড়ে চামেলীর ট্রাকপিষ্ট শব
কেমন বে-আব্রু, হায়। তবু রাধাচূড়া হাসে, মাপি
সঙ্গোপনে তার আহলাদের বহর এবং মনে
বেদনা লুকিয়ে নিরপেক্ষ চাঁদ মেঘে ডুবে যায়।
আমাকে খোঁজে না কেউ আর। লোকটার অন্তঃপুরে
কী কী ঘটে, সে কি অর্ধাহারে থাকে, না কি দিগ্ধিদিক
জ্ঞানশূন্য? পথ্য পায় ঠিকঠাক? সে কি আনাগোনা
করে চির দুঃখীরূপে? এ বিষয়ে সবাই নীরব।

জলকন্যাদের স্বপ্ন দেখি উপদ্রুত এলাকায়;
আমি কি ত্রাণের দ্রব্য চেয়ে নেব ভিক্ষুকের বেশে
দাতা দেবদূতদের কাছে? বিকৃতমস্তিষ্ক সাঁঝ
নামে আর জেগে ওঠে শবাহারী দুঃস্বপ্নের বন।
সর্বস্ব উড়িয়ে দিয়ে প্রখর হাওয়ায় অবেলায়
আকাশ, প্রান্তর, নদী আমাতেই করেছি ধারণ
অগোচরে, অথচ শাকান্ন সংগ্রহের আলোড়ন
গৌণ কাজে লিপ্ত রাখে, দুর্ভাবনা নিত্যসঙ্গী আজ।

আমি কি নিভন্ত খুব? নইলে কেন অতিশয় ক্লেশে
ধোঁয়াচ্ছে জীবন? এখনও তো সাধ হয় অকারণ
গান হ’য়ে জ্বলে উঠে। গলায় সুরের কারুকাজ
লুপ্ত বহুদিন; অপমানে দগ্ধ চলে যাব শেষে?

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 124

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts