Poem

ভায়োলেন্স

শামসুর রাহমান

শুধু কি ক্ষয়িষ্ণু গ্রামে-গঞ্জে লাঠিসোটা
গজরানো বাবরি (ঝড়মত্ত বৃক্ষচূড়া) ভাটা-চোখ, শক্ত কব্জি,
রামদা সড়কি আফ্রিকার জুলুদের মতো নেচে ওঠে
সংহার নেশায়?

শহুরে গলিতে, চোরাস্তায় আলোকিত ফোয়ারার কাছাকাছি,
তাড়ি-বুঁদ, শূন্য-হাঁড়ি মহল্লায় হৈ-হল্লা, দাঁত-নখ
খিঁচানো প্রহর কটমট
তাকায় চৌদিকে, যেন ডালকুত্তা। ইস্তিকরা কাপড়ের মতো
কলোনীও অকস্মাৎ বন্দুকের নল, তপ্ত ধোঁয়াময় হয়,
রক্তবমি করে সারি সারি ফ্ল্যাটে শহরে শহরে
নানা দেশে ঋতুতে ঋতুতে।
মেঘে মেঘে অন্ধকার পাতালে এবং দূর পবর্ত শিখরে
ধূ ধূ মরুবক্ষে কালান্তক স্বরে অস্ত্র হেঁকে যায়।
জলপাইরঙ কিংবা খাকি ইউনিফর্মের ভিড় গোলাপ বাগানে,
আপেল বাগানে, শস্যক্ষেতে। রাশি রাশি ভারি বুট
পাথরে কাদায় বাজে বনবাদাড়ে এবং সংখ্যাহীন হেলমেটে
মাইল মাইল-ব্যাপী সূর্যমুখী ঘন ছায়াচ্ছন্ন হয়ে যায়।

মনের ভেতরে খণ্ড প্রলয়ের উন্মত্ত ঝাপটায়
মধ্যবিত্ত প্রেমিকের চোখে ওথেলোর ভীষণ সবুজ চোখ
নিমেষে প্রবেশ করে, অতিশয় কর্কশ রাত্রির কিনারায় বিচুর্ণ স্বপ্নের মতো,
একরাশ বিমর্দিত জুঁইয়ের মতোন
প্রেমিকা নিঃসাড় পড়ে থাকে।
নানা রাষ্ট্র, বিশেষত উন্নতি-ঊর্মিল,
আদিবাসীদের মতো মদির উল্লাসে ধূপ-ধুনো
অথবা আগরবাতি জ্বেলে
নিয়ত বন্দনা করে নানাধর্মী বোমাকেই।
সুদুর দিগন্ত, লোকালয়, দ্বীপপুঞ্জ মুছে-ফেলা।
ঝড়ের পরেও কোনোদিন কূল পাবো কি পাবো না।
না জেনেই সঙ্গীহীন, পানির দংশনে জর্জরিত একা,
প্রায় ক্ষয়ে-যাওয়া
মান্দাস আকঁড়ে ধরে ভেসে চলি ক্ষুধার্ত সমুদ্রের
ভেসে চলি।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 114

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts