Poem

ডাইনোসর উঠে এলেও

শামসুর রাহমান

আমি তো মাঝে মাঝে বাইরেই যেতে চাই,
অথচ ঘর আমাকে আটকে রাখে।
ঘরে বসে আমি দেখতে পাই
এক চিলতে আকাশ, নীলিমার বিশালতা
দৃষ্টির আগোচরে থেকে যায়। কখনও সখনও একটি কি
দু’টি পাখি চোখে পড়ে। পাশের বাড়ির
জানালার ওপরের কার্নিশে
যুগল পায়বার কোমল প্রণয় আমাকে মুগ্ধ করে,
কিন্তু ঝাঁক ঝাঁক পাখি কি গোধূলি বেলা
নীড়পরায়ণ পাখির পঙ্‌ক্তিমালা
আমার উৎসুক দৃষ্টির আওতার
বাইরে রয়ে যায় মাসের পর মাস।

এ যেন নিঃসঙ্গ বন্দীর ক্লান্ত, দম আটকানো সুদীর্ঘ
প্রহর কাটানো, কিংবা তীব্র সাইনাসের
দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসরুদ্ধকর বেহাল অবস্থা,
মাথার ভেতর ভীমরুলের অশেষ চক্কর। কখনও
মনে হয়, মাথার ভেতর, নাকে মুখে সূচালো কিছু ঘাস
গজিয়ে উঠেছে। জোরে জোরে ডেকে চলেছি,
কিন্তু কোনও শব্দই বেরুচ্ছে না। কণ্ঠনালীতে
মুঠো মুঠো বালির খসখসানি। আবার মুমূর্ষু দিনান্তে
দুটো চোখই আচ্ছন্ন হয়
মৃত কুয়াশায়; আক্রান্ত হই হঠাৎ
কতিপয় কঙ্কালের অদ্ভুত হিংস্রতায় এবং
ওরা আমাকে বাধ্য করে আমার নিজেরই রক্ত চেটে নিতে।

দুঃস্বপ্ন এবং বাস্তবের মধ্যে কোন্‌টি প্রকৃত সত্য, এ নিয়ে
কী-যে ধন্দে পড়ে যাই, বোঝানো খুবই মুশকিল।
এই যে আমি আটকে আছি গুহাসদৃশ ঘরে,
নিঃশ্বাস নিতে অত্যন্ত কষ্ট হচ্ছে আমার-
শরীরে বিষাক্ত কাঁটা ফুটছে, চোখের ভিতর
ঢুকছে ঝাঁক ঝাঁক লাল পিঁপড়ে, মেরুদণ্ড কারা
যেন উপড়ে নিতে চাইছে বাঁকা, আগুন-তাতানো
শিক দিয়ে। কী এমন অপরাধ করেছি যে, সবাই
এরকম শক্রতা সাধতে উন্মুখ? অথচ
বন্ধ্যা মাটি আমি উদ্যান বানাতে চেয়েছিলাম,
বালুময় জমিনে ফল্গুধারা
বইয়ে দেয়ার শপথ নিয়েছিলাম সুর্যোদয়ের
দিকে মুখ রেখে। নিজেকে শুদ্ধতার
আভায় ভাস্বর করার আকাঙ্ক্ষা ছিল আমার।

কতিপয় মাংসাশী পাখির অন্ধকার-ছড়ানো
পাখার দাপটে অথবা এক পাল জন্তুর
তাণ্ডবে হকচকিয়ে, ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে খুরপি আর
কোদাল চালানো থামিয়ে দেবো? বাগান বানানোর
কাজ বন্ধ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকবো
সত্তায় হতাশায় কালো মেখে? ধূসর মাটি ফুঁড়ে
ডাইনোসর উঠে এলেও আমি পুষ্প বিকাশের
বীজ বপন করে যাবো কোনও সর্বনাশের তোয়াক্কা না করেই।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 149

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts