Poem

ঢাকা কলেজকে নিবেদিত পঙ্‌ক্তিমালা

শামসুর রাহমান

অর্ধ শতাব্দী আগে তোমার সঙ্গে আমার
প্রথম চক্ষুমিলন হয়েছিল;
তখন তুমি কাদায় পড়ে-থাকা
এক মুক্তো। সেই তুমিই আমার চোখের তারা কাঁপিয়ে দিলে
নতুন যুগের ঝলকে। তোমার আলোয়-ভরা
বুকে আশ্রয় নিলাম কুণ্ঠার কুয়াশা ছিঁড়ে।
দুটি হৈ-হল্লাময় বছর
তুমি আমাকে লালন করেছ দাইমার মতো।

আমি যে তোমার স্নেহার্দ্র ছায়ায়
বেড়ে উঠেছি, এতগুলো দিন কাটিয়েছি আনন্দের ঢেউয়ে
দুলে দুলে, কী ক’রে ভুলব সে-কথা?
তোমার বাইরের দীন দশা আমাকে বিষণ্ন আর
পীড়িত করেছে; কিন্তু এ-ও তো আমার জানা ছিল
তোমার অন্তর কত ঐশ্বর্যশীলা, যার আভা
যুগ যুগ সঞ্চারিত হয়েছে
তোমার অগণিত পালিত সন্তানের সত্তায়।

কোনো কোনোদিন তোমাকে ফাঁকি দিয়ে
তোমার ছায়া থেকে পালিয়ে
বাইরে বেরিয়ে পড়তাম ঝাঁ ঝাঁ রোদ কিংবা বৃষ্টিতে।
আবার চুপিসারে ফিরে আসতাম তোমারই কাছে,
তুমি মমতা-মাখা আঁচল দিয়ে আমার কপালের ঘাম
আর এক মাথা সপসপে চুল থেকে
বৃষ্টির পানি মুছে বুকে টেনে নিয়েছ
প্রগাঢ় ভালোবাসায়।

দাইমা, ওগো দাইমা আমার,
তোমার বুকের দুধ খেয়ে তোমার কত সন্তান
এখনো হাঁটছে পৃথিবীর নানা পথে,
অনেকে হয়ে গ্যাছে ছায়ারও অধিক ছায়া,
অনেকে পাণ্ডিত্যের কৈলাশ চূড়ায় উঠেছে,
অনেকে শিল্পের মানস-সরোবরে
সাঁতার কাটছে, অনেকে অত্যাচারী শাসকের
সান্ত্রীদের গুলিবিদ্ধ হয়ে বাংলা ভাষাকে পরিয়েছে
গৌরব মুকুট, অনেকে লড়াই করেছে একাত্তরে,
অনেকে জনগণের সংসারে জ্যোতি ছড়াবার
আকাঙ্ক্ষায় কারাবরণ করেছে বার বার,
এখনো রক্তে ভেজাচ্ছে শার্ট, এখনো লড়ছে স্বৈরতন্ত্র,
ধর্মান্ধতার মন্ত্র, অবিচার, অনাচার আর
কূপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে।

দাইমা, ওগো দাইমা আমার,
তোমার উদার স্তনের অমিয়ধারা কখনো শুকোবার নয়।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 116

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts