Poem

ধুলায় গড়ায় শিরস্ত্রাণ

শামসুর রাহমান

তোমার সয়নি তর, ভোরকেই কালসন্ধ্যা ভেবে
সাততাড়াতাড়ি বেপরোয়া
হাঁকালে চাবুক তুমি অস্থির ঘোড়ার পিঠে, গেলে
ছুটে দুর্নিবার
বৈশাখী হাওয়ার বেগে কেড়ে নিতে সোনার মুকুট
সুহৃদের মাথা থেকে। অনেকের ছিল জানা, তোমরা দু’জন
মানে সে রাজন আর তুমি ছিলে দস্তানা এবং
হাতের মতোই লগ্ন সকল সময়।

প্রতীক্ষা শেখোনি তুমি কিংবা শিখলেও
উচ্চাকাঙ্ক্ষা মোরগ-ঝুঁটির মতো হয়েছে ভীষণ আন্দোলিত
মাঝে-মাঝে। ফলত সফল
কোনো শিকারের পরে মোসাহেব আর
হুঁকোবরদার-পরিবৃত হয়ে ছিলে
যখন, তুমি
সে কোন গুহার পেট চিরে এক ঝাঁক
অদ্ভুত নিরালা পাখি এসে কালো করে
তোমার আকাশ কী-যে বলল
ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে, আস্তিনের সাপ
ছাড়া অন্য কেউ ঘুণাক্ষরে
বোঝেনি সে-ভাষা।

হঠাৎ শিউরে ওঠো কেন? রুটি টুকরো
করার সময়
রুটির ভেতর থেকে রক্ত ঝরে
বুঝি? নাকি মাছের ঝোলের
বাটি এক লহমায়
হয়ে যায় রক্ত সরোবর? একি, তুমি
নিজের ঘরের চার দেয়ালে খাটের
বাজুতে এবং পারসিক গালিচার
রক্তধারা দেখছ নিয়ত। আর যে ছুরি লুকিয়ে

রাখো তুমি সর্বদা কোমরে,
অষ্টপ্রহর সে যাচ্ছে বকে অবিরত
অসুস্থ প্রলাপ।
অবশ্য এখন তুমি বিভোর নিজের
মুকুটিত শোভা দেখে। দর্পণও তোমার, মনে হয় আজ্ঞাবহ
চাটুকার ইদানীং। যে ছবি দেখতে চাও তুমি
নিমেষে সে ছবি ফোটে জমাট পারদে। অতিশয়
বিজ্ঞ তুমি, উপরন্তু নিখুঁত তোমার চাল। তবে
এ-ও সত্য বলে জেনো, ‘কোথায় মুকুট’ বলে তুমি
অকস্মাৎ আর্তনাদ করে উঠবে একদিন দুঃস্বপ্নের ঘোরে,
দেখবে দু’চোখ মেলে কাঁটাতারে মৃত কালো পাখিটার সঙ্গে
ঝুলে আছে অস্তরাগে রক্তাক্ত গৌরব,
ধুলায় গড়ায় শিরস্ত্রাণ। ক্রমাগত রৌদ্রজলে জং ধরে
শিরস্ত্রাণে আর সেখানেই
দুলিয়ে দর্পিত মাথা হাসে রক্তজবা।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 124

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts