Poem

দীর্ঘ কেঁদে যায়

শামসুর রাহমান

কোনো কোনো নিদ্রাহীণ রাতে জানালায়
গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তজবা ফুটে থাকে। ওরা
আমার টেবিলে-রাখা কবিতার খাতার ভেতরে
প্রবেশ করতে চায় নিরিনিলি, বলে-
বিজনে আমরা জ্বলি, দূরে কাঁদে কে একাকী নিঃসঙ্গ শয্যায়,
বিজনে জ্যোৎস্নাও কেঁদে যায়, কেঁদে যায়, কেঁদে যায়।
কিছু হাড়, কিছু শুকনো পাতার ওপরে
আহত পাখির মতো নিথর জ্যোৎস্নাও কেঁদে যায়।

মনে পড়ে
জনশূন্য নদী তীরে, নাঙ্গা আকাশের নিচে
ব্যাপক বিকেলে
কতিপয় বিষণ্ণ নাবিক
নুনমাখা দাড়ি আর রাঙা চোখ নিয়ে দিগ্ধিদিক
করেছিলো ছুটোছুটি, খুব ক্লান্ত হয়ে

নিরাশায় স্নান করে সর্বদা গন্তব্যহীনতার ধুধু ভয়ে
শুয়েছিলো মাটিতে সটান, তারপর
ওঠেনি কখনো- বহু দূরে কিছু বালির কবর,
এলোমেলো দাঁড়
দেখে যদি কেউ কোনোদিন
থমকে দাঁড়ায়, তবে করুণ সঙ্গীত, ভায়োলীন
কিংবা অন্য কোনো বাদ্যযন্ত্র থেকে নয়,
প্রকৃতির থেকে জেগে উঠবে সহসা, মনে হয়।

এখন আমার হাত থেকে সুর ঝরনার মতন
উৎসারিত ক্ষণে-ক্ষণে, সুরের ভেতর থেকে সুর
ঝরে যায় বনাবৃত নিরালায়। মন
ঘরের নিকটে যেতে চেয়ে ফিরে আসে, অশ্বখুর
বেজে ওঠে বারংবার হৃদয়ের খুব অভ্যন্তরে,
নাশপাতি বন দোলে, কার মুখ, চক্ষুদ্বয়, স্তন,
বসে-থাকা, হেঁটে-যাওয়া আঁচল উড়িয়ে, মনে পড়ে।
আমার শয্যায় সারাক্ষণ
সে কার অস্পষ্ট ছায়া শুয়ে থাকে ছায়াময়তায়।
হা-হা স্বরে
আমার শয্যায় জ্যোৎস্না কেঁদে যায়, দীর্ঘ কেঁদে যায়।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 132

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts