Poem

এ-ও তো বাংলাই এক

শামসুর রাহমান

এ-ও তো বাংলাই এক, তোমার ধ্যানের বাংলাদেশ
হোক বা না হোক; আজও এখানে এ-বাটে দৈনন্দিন
চলে আনাগোনা নানা পথিকের, মাঠে বীজ বোনে
ধান কাটে কর্মিষ্ঠ কৃষক আর মাঝি টানে দাঁড়।
অবশ্য নিরন্ন মনমরা রাখালের দল ভাঙা
বাঁশি ফেলে, দিগন্তের হাম্বারব থেকে খুব দূরে
সহসা শহরে ছোটে কারখানার ভেঁপুর মায়ায়।
দুঃস্বপ্নে বাঁচাই সার, অগণিত অজ্ঞাত করুণ
কংকালে শিউলি ঝরে। দেশব্যাপী লুটেরা জোচ্চোর
স্ফূর্তিতে বিহ্বল; কেউ কেউ ওরা ভাটিয়ালী গায়,
অনেকে ট্যাঙোর তালে কোমর দোলায়, কখনোবা
চাঁটি মারে পরস্পর, স্বদেশী বর্গীরা দেয় হানা
পাড়ায় পাড়ায়, কখন যে কার থলে থেকে, হায়,
বেড়াল বেরিয়ে পড়ে আচমকা। বস্তুত এখানে
জন্মান্ধেরা পথপ্রদর্শক এবং নির্বোধ যারা
তারা দ্রুত ধাবমান যততত্র বাধাবন্ধহীন
আর যারা মেধায় মননে ধনী, আড়ালেই ফোটে
তাদের স্বস্তির ফুল; মনে নিয়ে অনাস্থার কাঁটা
খোঁজেন বাঁচার মানে কীর্কেগার্ড অথবা মার্ক্সের
পুঁথির পাতায় কিংবা কাফকার জগতে কখনো।

অথচ আস্থার শান্তিকেতনে ছিলে তুমি কবি,
বিশ্বাসের বিশ্ব ছিল নিজস্ব তোমার। কোনো কোনো
মুহূর্তে হঠাৎ সেই ভূমি কেঁপে উঠলেও তুমি
সুস্থ মননের সব ভূদৃশ্যের ছিলে অধীশ্বর।

এবং শিল্পের ঘাটে দিয়েছ ভাসিয়ে কতদিন
বহুধা বিরোধ আর ইস্টিপত্রে স্বপ্নের নতুন
জমিজমা গেছ লিখে বংশধরদের নামে আর
তোমারই দাক্ষিণ্যে ব্যাপ্ত আমাদের নান্দনিক সীমা।

সবই তো বেসুরো বাজে আজকাল, অথচ তোমার
গানের অজস্র জলে যোজন যোজন রুক্ষ ভূমি
হয়ে যায় নিমেষেই গোলাপ বাগান আর রুগ্ন
মজা নদী ফিরে পায় তরঙ্গিত তুমুল যৌবন।

বাংলার আকাশ তুমি, তুমি বনরাজি, সমুদ্রের
নির্জন সৈকত তুমি অন্তহীন, তুমি বাউলের
বিজন গৈরিক পথ, গৃহস্থের মুখর প্রাঙ্গণ,
আমাদের ষড়ঋতু তুমি, তুমি বাংলার প্রান্তর।
কী পুণ্য স্তব্ধতা তুমি মানবিক, তুমি রাগমালা;
তুমি তীর ছেড়ে দূরে যাওয়া, তুমিই প্রত্যাবর্তন।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 128

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts