Poem

এই নবান্নে

শামসুর রাহমান

মাছের কাঁটার মতো নক্ষত্র কি খুঁচিয়ে তুলবে ক্ষত আর
কোকিল রটাবে কোনো দুঃসংবাদ? এখন তো সংবাদ মানেই
দুঃসংবাদ প্রতিদিন। শুধু টেলিপ্রিন্টারের রিবনের নিচে
নয়, কবিতার স্তবকেও দুঃসংবাদ ফুটে রয় বাস্তবিক।
হে আমার গিল্টিকরা নকল সোনার বাংলা তুমি ক্ষেতে ক্ষেতে
বুনে যাচ্ছো ড্রাগনের দাঁত, ওষ্ঠে নিচ্ছো তুলে বিষাক্ত শিশির।
হয়ে গ্যাছো অতিশয় দরিদ্র দোকান। বড়ো বেশি দেরি করে
ফেলছো, বস্তুত দ্যাখো প্রকৃত পুরুষ্ট বীজ হচ্ছে পরিণামহীন।

কতো কিছু দেখি চতুষ্পার্শ্বে, দেখি কবরের মাটি ফুঁড়ে হাত,
শত শত, উঠে আসে, দ্যায় ছুড়ে স্বর্ণ থালা; দেখি রাজপথে
এখন একটি রাজহাঁস তার চঞ্চুতে নাচাচ্ছে কী হলুদ
নবান্নের দিন। রাশি রাশি ধান উড়ন্ত গালিচা হয়ে দ্রুত
কুয়াশায় মিশে যায়; প্রতিধ্বনিকে চুম্বন করে ঝাঁক ঝাঁক
পরিযায়ী পাখি, শহরের আনাচে-কানাচে ফেরেশ্‌তার ভাঙা
ডানা পড়ে থাকে; কত বিষণ্ন করোটি ফুটপাতে, ঝোপেঝাড়
কালোবাজারির বন্ধ গুদামের আশেপাশে লুটায় কেবলি।

যখন ঘুমায় শিশু দোলনায়, আমার হৃদয় নিরিবিলি
পাখির ছায়ার মতো শান্তি নামে; প্রিয়তমা ঘুমায় যখন
স্বপ্নের মেঘের মতো বিছানায় ছড়িয়ে চুলের শস্যরাশি,
আমি সে ঘুমের ঢেউয়ে ঢেউয়ে বিটোফেনি সঙ্গীতের
মতো ভাসি, অথচ যখন অগণিত অনাহারী নানা রুক্ষ
টানা-হ্যাঁচড়ায় নবান্নের দিনে ক্লান্ত শুয়ে থাকে সংবিধানে
নিঃসাড়, যখন সংখ্যাহীন মৃত শিশু খাদ্যবাহী জাহাজের
দিকে মুখ করে পড়ে থাকে, আমার মগজে জ্বলে মরুভূমি।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 129

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts