Poem

একটি উদ্যানের ইতিকথা

শামসুর রাহমান

বলব না কোনওদিন, এ-কাজ আমিই শুধু করেছি একাকী
কিছুই ছিল না, আমি এই বিরানায়
নিষ্ফলা মাটিতে এসে বড় একা দাঁড়িয়ে ছিলাম।
রুক্ষ, বন্ধ্যা জমিনে ছিটিয়ে বীজ, বহুদূর থেকে জল এনে
সরস করেছি মাটি, নতুন জন্মের ঘ্রাণে চতুর্দিক হেসে
উঠেছিল। বলব না, এ কেবল আমার একার সৃজনের রূপটান।

ভাসমান মেঘ বলেছিল, হে শ্রমণ,
তুমি চাইবে না, তবু রুদ্র তাপে ছায়া দেবো,
পেয়েছি ছায়ার বদান্যতা বারবার। জ্যোৎস্না এসে
আন্ধারকে করেছে পূর্ণিমা আর শিশিরের স্নেহ
ফুটিয়েছে ফুল রাশি রাশি
রঙ বেরঙের, এ উদ্যান গড়িনি কখনও একা।

কখনও করিনি স্বত্ব দাবি, ‘আমারই, আমারই’ বলে
কাঁপাইনি কোনও দিক, কোনও পাড়া, এ তোমার, তার,
বস্তুত সবার-এই সত্যটুকু লিখেছি জমিনে,
গাছের পাতায়, সুদূর নক্ষত্রলোকে, রাঙা দিগ্বলয়ে।

বন্ধুগণ, এই লিপি পাঠ করা বড়ই সহজ; দ্বিধাহীন
স্পষ্ট করি উচ্চারণ, এ উদ্যান তোমাদের থাক চিরদিন,
দিকে দিকে প্রবল কীর্তিত হোক তোমাদের অবদান, শুধু
দূরে অন্তরালে বসে ভাবব, বস্তুত উদ্যানের গৌরবগাথায় আজ
আমি তো নিমিত্ত মাত্র। কাউকে কিছু না বলে পথচারীহীন
পথে চলে যেতে পারি, আকাশে সূর্যাস্ত, ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায়;
এখন তোমরা ছায়াপ্রতিম আমাকে
দীর্ঘশ্বাস ছাড়াই বিদায় দাও, আমি দ্রুত অপসৃয়মাণ স্মৃতি।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 105

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts