Poem

এরকম কিছু

শামসুর রাহমান

বাড়িটা সেকেলে, কিন্তু বাসিন্দারা একালের নব্য
সামাজিতায় ঝলমলে,
সান্ধ্য আসরের টানে অনেকেই আসে; গোলাপ ঠুমরী গায়,
শাণিত বুদ্ধির ঝলকানি লাগে কথোপকথনে।

সে ছিল নিঃশব্দে ব’সে এক কোণে তক্তপোশে, তার
রূপ রহস্যের মাতৃভাষা বলে; রত্নের ঝলক
ছিল চোখে, এ ঝলক
নিয়ে যায় বহুদূরে শতাব্দী পেরিয়ে কোনোখানে
দুর্গের দেয়াল-ঘেঁষা সিঁড়িতে এবং
দেখায় প্রাচীন হ্রদ রুশোর চিত্রের মতো রঙিন জঙ্গলে।

অনাবিল গণিতে উজ্জ্বলতা অত্যন্ত একাকী
খেলা করে তার মনের ভেতরে আর
কী এক শুদ্ধতা গান হয়ে
মনীষার আভায় জড়ায় তাকে। হয়তো এরকম
কাউকেই বলা যায়, ‘তোমারই উদ্দেশে
আমার প্রতীক্ষা চোখ বিছিয়ে রেখেছে শূন্য পথে আজীবন’।

মনে পড়ে, তাকে ঘিরে সামাজিক মধুমক্ষিকার
গুঞ্জরন ছিল সারাক্ষণ, দৃষ্টির লেহন ছিল, ছিল বটে
বিয়ারের ভরা গেলাসের মতো উপচানো
আবেগ বিভিন্ন কণ্ঠস্বরে। আমি শুধু দূর থেকে
সৌন্দর্য করেছি পান; আমার দু’চোখ নিরলস
পর্যটক তার শরীরের পাণ্ডুলিপিতে, আমার অভ্যন্তরে
সাময়িক ভালোবাসা বল্মীকের মতো গড়ে ওঠে।

রাত বাড়ে, রাতের গুহায় যেন শেয়ালের ঘ্রাণ জেগে থাকে,
কিছু উদ্ভিদের জিভ ক্রমাগত চাটে আমাকে এবং আমি
কাউকে কিছু না বলে গোয়েন্দা ভঙ্গিতে
নেমে যাই গহন রাস্তায় বড় একা। শিস দিয়ে
তাড়াই মনের বাঘ, আমার ব্যাকুল
অস্তিত্বের ঝোপঝাড়ে অবিরত ডেকে যায় অনিদ্র কোকিল।

কী যে তার নাম, কিছুতেই মনে পড়ে না এখন। সে সন্ধ্যায়
তার সঙ্গে বলেছি কি কোনো কথা? আমিও কি ঝানু
বাচালের মতো আচরণে তার একাকিত্বে খুব
ধরিয়ে ছিলাম চিড় ঠুকরে ঠুকরে? মনে
নেই, ওর দুটি
চোখ ছাড়া আজ আর কিছুই পড়ে না মনে। কোনো
ভনিতা না করে বলি, মনে হয় পুনরায় সেই দুটি চোখ
দেখার আশায় বেঁচে থাকি,
বেঁচে থাকি কলরবময় এই পৃথিবীতে আজও।
সত্যি মনে হয়; নাকি এরকম কিছু ভাবতেই ভালো লাগে?

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 143

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts