Poem

ঘরে-ফেরানো গানের জন্যে

শামসুর রাহমান

আমি কোনও দিগ্বিজয়ী সম্রাট নই, নই তো কোনও পরাক্রান্ত
ভূ-স্বামী, একম কি জাঁদুবেল কোনও রাজনীতিবিদ অথবা
দাপট-দেখানো আমলাও আমাকে বলা যাবে না, তবু সমুদ্র
প্রায় অষ্টপ্রহর চামর দোলাচ্ছে আমারই উদ্দেশে যেন আরাম
আয়েশে কাটে আমার সময়। শুধু তাই নয়, এইমাত্র সমুদ্রের
বুক ছেড়ে পূর্ণিমা-চাঁদ হঠাৎ লাফিয়ে উঠে তার নিরুপম মুখ
বাড়ালো চেন্নাইস্থ আমার অস্থায়ী আস্তানা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অতিথিশালার উঁচু ঘরের দরাজ জানালায়। ‘স্বাগতম’ বলে
চমকে ওঠে আমার দু’চোখ আর হৃদপিণ্ড। এমন মুহূর্তে ওকে
চন্দ্র নয়, চন্দ্রা, বলে ডাকতে ভারি সাধ হলো। তার স্বর্গীয়
রুপোলি চুম্বন আমি গাঢ় অনুভব করলাম আমার তৃষ্ণার্ত
ওষ্ঠে, যেন একটি গীতিকবিতা জন্ম নিল মহা মুহূর্তে।

চাঁদ ডুবে গেলে চাঁদিনীর স্মৃতি জেগে রয়। এখন এই
মুহূর্তে আমার মনে কয়েকটি প্রিয় মুখ চাঁদের চেয়েও অধিক
প্রাধান্যে ভাস্বর-এই তো দু’জন শিশু নয়না আর দীপিতা আমাকে
জড়িয়ে ধরেছে আনন্দর ঝর্ণা ঝরিয়ে। আমি ব্যাকুল চুমোয়
আচ্ছন্ন করি ওদের হঠাৎ কী-যে হলো, অকস্মাৎ জ্যোৎস্নাকে
খুন করে অন্ধকার ছেয়ে যায় চতুর্দিকে সন্ত্রাসীর মতো। কবে
আবার খুঁজে পাব অভীষ্ট রোদ্দুর কিংবা জ্যোৎস্নাধারা
যেখানে আজ যেতে চাইছি প্রবল ব্যাকুলতায়, সেই গন্তব্যের
দিকচিহ্ন খুঁজে পাচ্ছি না কেন? সমুদ্রের জ্যোৎস্নাময় ঢেউগুলি মুছে
গেছে, কয়েকটি কঙ্কালসার গাছ দাঁড়িয়ে আছে নিষ্কম্প,
দরিদ্র। সরে যাচ্ছি দূরে, কোন্‌ সুদূরে? তোমরা যেতে দিওনা
আমাকে। আমার হাত ধরো, গাও ঘরে-ফেরানো গান।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 145

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts