Poem

আমার চরম শক্র ঘড়ি, সময়কে অবিরল
প্রবল শাসন করে টিক টিক্‌ ধ্বনি
দিয়ে আর আমাকে কেবলি
ঠেলে দেয় মরু শেয়ালের গায়ের রঙের মতো
অন্ধকারে। অসহায় আমি
গড়িয়ে চলেছি শোকে ঢালু বেয়ে ক্ষয়ে যাওয়া নুড়ির ধরনে।

‘চটপট উঠে পড়’, বলে ঘড়ি আমার উদ্দেশে প্রহরীর
কায়দায়, ‘তোমার সময় হলো এ ড্রইংরুমের
নিবিড় আশ্রয় ছেড়ে যাবার। এবার
পথে নেমে যাও, আর কত কাল তার মুখোমুখি
থাকবে বসে? খানিক তাকিয়ে
তোমার মুখের দিকে পথ চলি, সুসময় ঝরে যায় পথে।

এখন আমার বুকপকেটে তোমার হাতচিঠি
দোয়েলের শিস, বেবি ট্যাক্সির জঠরে
বসে ভাবি, আমার জীবন যেন তোমার নিকট
অলিখিত তমসুক। ঘড়ি
আমাকে ঝাঁকুনি দিয়ে জানায়, তোমার
জীবন ফুরিয়ে এলো, ওহে, এ সামান্য কথা ভুলে বসে আছো?’

কী করে যে সারা মাথা চকিতে সাজানো
হয়ে গেল কাশফুলে, কাঁকড়ার প্রখর
পদচ্ছাপে ভরে গেল মুখ
কিছু তো জানি না। অগোচরে প্রৌঢ়ত্বের
চিতা পুড়ে হলো ছাই, তবুও তোমাকে খুব কাছে
পাবার বাসনা আজো কিছুতে নেভে না।

সব কিছু এত দ্রুত অস্তাচলে যায়,
ঠাওর হয়নি আগে। কব্জিতে কৌতুকপ্রিয় ঘড়ি
চোখ মেলে মিটি মিটি হাসে
ভাঁড়ের ভঙ্গিতে; তার মুখ
ভীষণ পুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। অভিমানে দূরে
ছুঁড়ে ফেলে দিলে বুঝি স্বস্তি বোধ হবে?

প্রকৃত গেরস্ত নই, অথচ নাছোড় শক্র নিয়ে দিনভর
রাতভর চলে গেরস্থালি।
সে যত রাঙায় চোখ, আমি তত বিষণ্নতা থেকে,
ভয় থেকে দূরে থাকি একা হেমন্তের
মধ্য দিয়ে যেতে যেতে। হৃদয়ের পবিত্র আগুনে
মদির আলস্যে ঘড়ি গলে গলে যায় গোধূলিতে।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 114

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts