Poem

কেন তবে রক্তে উঠেছিল ঝড় উথাল পাথাল?
আমি তো ছিলাম দূরে অতিশয় শান্ত গ্রামে তাল-
তমালের ভিড়ে, মাঠে, নিসর্গের উদার ডেরায়।
কখনো দেখেছি আর্ত চোখে, হায়, ঘরের বেড়ায়
বেজায় ধরেছে ঘুণ, খুঁটি নড়বড়ে। তবু শক্ত
মুঠোয় লাঙল ধরে চষেছি কাজল জমি, রক্ত।
অবাধ্য শিশুর মতো হ’ত নতুন শস্যের ঘ্রাণে।
নোলক উঠত দুলে যার চিড়ে-কোটা তালে, প্রাণে
যে জন ফোটাত ফুল চম্পক আঙুলে, তার মুখ
ইঁদারার পাশে, ঘাটে দেখলেই হৃদয় কিংশুক।

হে রাখাল, হে দোতারা তোমাদের কাছ থেকে দূরে
কখনো পারিনি যেতে। আলুথালু পরাণ বধূরে
ফেলে রেখে গৃহকোণে বিরান কোথাও দরবেশী
আস্তানায় কম্বলে ঢাকিনি দেহ কিংবা পরদেশী
হইনি কড়ির লোভে। কেন তবে সহস্র বাসুকি
তুলল ফণা আমার তরুণ রক্তে? কেন ঠোকাঠুকি
অস্ত্রোশস্ত্রেও মগজের কোষে কোষে? আমিও হঠাৎ
কেন গণ্ডগ্রামে অস্ত্রাগারে ক্ষিপ্র বাড়ালাম হাত?
কখনো শুনিনি কোনো নেতার বক্তৃতা, কোনো দিন
যাইনি মিছিলে, হাতে তুলিনি নিশান। গণচীন,
মার্কিন মুল্লুক কার কেবা শক্র-মিত্র, এই তথ্যে
ঘামাইনি মাথা। আমার কী কাজ কূট তর্কে, তত্ত্বে?
যাকে ভালোবাসি সে যেন পুকুরে ঘাটে ঘড়া রোজ
নিঃশঙ্ক ভাসাতে পারে, যেন এই দুরন্ত ফিরোজ,
আমার সোদর, যেতে পারে হাটে হাওয়ায় হাওয়ায়,
বাজান টানতে পারে হুঁকো খুব নিশ্চিন্তে দাওয়ায়,
তাই মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও এই এঁদো গণ্ডগ্রামে
ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম কী দূর্বার সশস্ত্র সংগ্রামে।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 425

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts