Poem

হাসির কবিতা

শামসুর রাহমান

সভাকক্ষ থইথই শ্রোতাদের ঝলমলে ভিড়ে
যখন এলেন তিনি, কবি,
সুকান্ত রাজার মতো মাথা উঁচু করে,
ক্ষণিকের জন্যে গুঞ্জরণ উঠে ফের
নেমে আসে স্তব্ধতা। ঘোষক তার ঘোষণার
পর্ব শেষ করে
অন্তরালে চলে গেলে, কবি,
খ্যাতির আলোয় দীপ্যমান, এলেন চেয়ার ছেড়ে
মাইক্রোফোনের কাছে এবং তুমুল
করতালি তাঁকে নিয়ে যায় কী মোহন তরঙ্গের
ফেনিল চূড়ায় আর কবির দৃষ্টিতে
সভাকক্ষ একটি বিশাল রক্তজবা হয়ে ফোটে।

করতালি স্তব্ধ হলে কিন্নর কণ্ঠের অধিকারী
কবি তাঁর সংক্তিমালা করলেন পাঠ
অনিন্দ্য ভঙ্গিতে। কিন্তু কী আশ্চর্য, পাঠান্তে শ্রোতার
করতালি পান নি শুনতে তিনি, শুধু
মরীচিকাতুল্য নীরবতা, ভীষণ অস্বস্তিকর, ভেংচি কাটে
তাঁকে সারাক্ষণ, তিনি নাকি
এমন কবিতা আগে লেখেন নি কস্মিনকালেও।
এ যেন বাসের ভিড়ে যাত্রীকে ভীষণ
ঝাঁকুনি দেয়ার নামান্তর। ছন্দ নেই, সুর নেই, নেই মধুর কথার
গুঞ্জরন পর্বে পর্বে, উপরন্তু কবি
অর্থকে পাঠিয়েছেন বানপ্রস্থে, যেন
বিশ্বাসঘাতক তিনি, অনুরক্ত ভক্ত শ্রোতাদের
খুব ঠাণ্ডা মাথায় প্রকাশ্যে
করেছেন খুন, কেউ তাঁকে পুষ্পস্তবক অথবা
এউ-ঢেউ মালা, মৃদু সাধুবাদ দিলো না কিছুই। অকম্পিত
হোমশিখা, রাজার মতোই তিনি মঞ্চ থেকে নেমে
যেন গৃহবলিভূকদের মধ্য দিয়ে
গেলেন একাকী হেঁটে অভ্যর্থনাহীন।
অকস্মাৎ রাত তিনটেয় কবি ঘুম থেকে জেগে উঠে তাঁর
কবিতার খাতা
খুলে বসলেন আর শাদা পাতাটায়
ভোরবেলাকার
আবীরের মতো কিছু অক্ষর সাজিয়ে ছন্দে-মিলে
লিখলেন নিদারুণ হাসির কবিতা।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 145

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts