Poem

ইচ্ছেটাও মৃত

শামসুর রাহমান

কে যেন ঠুকরে দিল খুব জোরে ঘুমন্ত আমাকে
আপাদ মস্তক। চোখ খুলতেই দেখি, একি পুবে ও পশ্চিমে,
উত্তর দক্ষিণে ভয়ঙ্কর দাঁত-নখ বের-করা অন্ধকার-
বসে আছে বিকট শকুন এক, যার
চঞ্চু থেকে ঝরছে শোণিত। ‘মানবতা
হয়েছে শিকার তার’, কারা যেন গলিপথে হেঁটে
যেতে-যেতে বলে গেল ভয়ার্ত গলায়। শয্যা ছেড়ে
উঠতে চেয়েও ব্যর্থ আমি, এক ফোঁটা আলো নেই কোনওখানে।

বহুদিন হ’ল শহরে ও গ্রামে, কোনওখানে কারও
ঠোঁটে হাসি নেই, এমনকি শিশুরাও হঠাৎ হাসতে ভুলে গেছে
যেন কোন্‌ অশুভ সংকেতে। আমি আজ
কলমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শুনি হাহাকার,
খাতার সফেদ পাতা কেঁপে ওঠে নিরন্ত ফোঁপানি এবং
শৃংখলিত কারও ঝাঁকুনিতে যেন। কে আজ সহায়?
এই হিংস্র অন্ধকারে, হে বিদ্রোহী কবি, আজকাল
আপনাকে বড় বেশি মনে
পড়ছে আমার ক্ষণে ক্ষণে, আপনি তো ঢের আগে
কারার লৌহকপাট তুমুল ভাঙার,
লোপাট করার আর জোর সে হ্যাঁচকা টানে
গারদগুলোকে, ওহো, প্রলয় দোলায়
দুলিয়ে কঠোব কুশাসন সমাপ্তির মন্ত্র জপিয়ে ছিলেন
দেশবাসীদের দিকে দিকে শহরে ও পাড়াগাঁয়।

এই বুনো তিমিরে আপনি কবি পুনরায় সূর্যের মতোই
চোখ মেলে বাবরি দুলিয়ে ঝোড়ো বেগে এই জ্যৈষ্ঠে চলে এলে
ভণ্ডদের ক্রূর খেলা হবে শেষ, পশ্চাতগামীর ভুয়ো জয়ঢাক
যাবে থেমে তিমির-বিনাশী প্রগতির
দীপ্ত সুরে। আমরা এখনও ব্যর্থতার
কাদায় আকণ্ঠ ডুবে আছি, হয়ে যাচ্ছি ক্রমে কাদার পুতুল!

শুভবাদী পুষ্পগুলি ঝরে যায় অতিশয় দ্রুত,
জানি আজ জাঁহাবাজ দানোদের পায়ের টোকায়
বিচূর্ণ, বিধ্বস্ত কত বিদ্যাপীঠ, বোবা
কান্নায় ত্রিলোক কম্পমান!
মূঢ়, মূর্খদের থুতু, বাচালতা তাড়িয়ে বেড়ায়
বস্তুত ধীমানদের সর্বক্ষণ, পথে ও বিপথে
পড়ে থাকে লাশ, শুধু লাশ। কারও দিকে
কারও তাকাবার ইচ্ছেটাও মৃত।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 111

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts