Poem

জীবনানন্দকে নিয়ে

শামসুর রাহমান

এই যে কবিতাটি আজ লিখছি শীতসকালে
এটি যদি আমার সদ্যতারুণ্যে
চুলের মুঠি ধরে আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিতো
প্রেরণা নাম্নী চঞ্চলা তবেই হতো সমীচীন।

আজ যখন আমার বয়স গোধুলি ঘাটে বসে
ঈষৎ যন্ত্রণায় সেই না-লেখা কবিতাকেই
ডেকে আনছি গর্ভধারণে উন্মুখ খাতায়।

কবিতাটি লিখতে গিয়ে শুরুতেই
ব্যবহার করে ফেলি শিশির;
শব্দটি তক্ষুণি কেটে দিলাম জীবনানন্দের
ধূসর পাণ্ডুলিপির কবিতা মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে।

অন্য একটি ছত্রে ছটছটে ঘাসফড়িং এসে বসতেই
ওকে চটজলদি উড়িয়ে দিতে হলো
জীবনানন্দীয় ঘ্রাণ পেয়ে এবং
ঘাইহরিণী আমার মনে পা রাখতেই থামতে হলো
ওকে ঠাঁই দেওয়া গেল না
কোনো পঙক্তিতে। একটি লাইনের শেষে
আছড়ে পড়ল ধানসিঁড়ির নরম জল
আর অমনি সেই ছলছলানি ঢাকা পড়ল বলপেনের কালোয়।

এই ভোরবেলা, যখন রোদ বারান্দায় বিশ্রাম নিচ্ছে
হরিণের মতো, প্রাতঃস্মরণীয় জীবনানন্দ
বড় বেশি জ্বালাতন করছেন আমাকে। মনের মতো
কোনো একটি পঙ্‌ক্তিও
লিখে উঠতে পারছি না তাঁর উৎপাতহীনতায়।
এই মুহূর্তে, যখন সবাই
প্রত্যেকের কাজ করছে কম বেশি দক্ষতায়,
আমার খাতার পাতায় শুধু অমাবস্যা।

এই হতাশার হাতুড়ির ঘায়ে কী করি?
লুপ্ত আমার কূলকিনারা?
এখন জীবনানন্দকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে
আট্‌কে না রেখে তাঁরই শব্দগুলোকে আনকোরা পরিপ্রেক্ষিতে
স্থাপন করে কুড়িয়ে নেবো অক্ষরগুলো, খাতার
অমাবস্যাকে বদলে দেবো পূর্ণিমায়।
দেখি তিনি কী করে
আমার নিজস্ব পঙ্‌ক্তিমালার মাঝখানে এসে দাঁড়ান?

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 111

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts