Poem

জনৈক পাঠান সৈনিক

শামসুর রাহমান

কখনো জঙ্গলে কখনোবা খানাখন্দে ইতস্তত
বাঙ্কারে অথবা ক্যাম্পে উঁচিয়ে বন্দুক
ঘামে রক্তের গন্ধে কী প্রকার আছি
সর্বদা হত্যায় বুঁদ হয়ে-
বলা অবান্তর।
আমার স্মৃতিতে কোনো নিশান দোলে না
ক্ষণে ক্ষণে, দোলে না কামান কারবাইন।
এখন স্মৃতিতে
আমার সুদূর গ্রাম, ছোট ঘর, শিশু
চিঠি হাতে অশ্রুময় বিবি জেগে ওঠে বার বার
আলেখ্য স্বরূপ। দেয় হাতছানি আমার আপন সরহদ।
কেমন নিঃসঙ্গ লাগে মধ্যে-মধ্যে, যখন তাকাই
ডবকা নদীর দিকে, যুগল পাখির দিকে দূরে।

এ মুল্লুকে জিপসির মতো ঘোরে মৌত, বড় ক্ষিপ্র;
হচ্ছে ফৌত বেশুমার লোক, বড় নিরস্ত্র নিরীহ,
দেহাতি, শহুরে, দিনরাত। গ্রামে গ্রামে
দেয় হানা সাঁজোয়া বাহিনী, মানে আমরাই। যুবা,
বৃদ্ধ, নারী, শিশু
শিকার সবাই-চোখ বুজে ছুড়ি গুলি ঝাঁক ঝাঁক।
মনে হয়, যেন আমি নিজেই কাবিল।
কিছু বুঝি আর না-ই বুঝি, এটুকু ভালোই বুঝি
আমাদের সাধের এ রাষ্ট্র পচা মাছের মতন
ভীষণ দুর্গন্ধময় আর
ক্ষমতান্ধ শাসকের গদি সামলাতে
আমরা কাতারবন্দি ফৌজ সর্বদাই।

যে ক্যাপ্টেন আমাকে এগোতে বলে শুধু
বিপক্ষের দিকে,
হোক সে নিরস্ত্র কিংবা সশস্ত্র তুখোড়,
দেয় ঠেলে গায়েবী মৃত্যুর ঝোপঝাড়ে
নদীতে নালায়,
সে কি মিত্র কখনো আমার?
শক্র সে আমার সন্তানের,
আমার শয্যার শক্র সুনিশ্চিত জানি।

যুদ্ধে পক্ষ-বিপক্ষ থাকেই চিরকাল।
অথচ বুঝি না কিছুতেই
আমার মৃত্যুর পরে ফের
কোন দলে থাকব এই গুলিবিদ্ধ আমি?

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 106

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts