Poem

যখন বৃষ্টি পড়ে

শামসুর রাহমান

দিনটি শুরুই হয়েছে ঘন মেঘময়তা আর ঘোর
বর্ষণ নিয়ে। শ্রাবণ তার সারা গায়ে গায়ে কাজল শাড়ি জড়িয়ে
এসেছে আমার আপন শহরে। আমি একজন
উজ্জ্বল নারীকে জানি, যে আষাঢ় আর শ্রাবণের
কৃষ্ণবরণ মেঘ এবং রাধার মতো আকাশেচেরা বিদ্যুল্লতা
দেখে আবেগবিহ্বল হয়ে পড়ে।
যখন বৃষ্টি পড়ে রিমঝিম কিংবা ঝমঝমিয়ে, তখন
তার হৃদয়ে সেতারের ঝালা, রক্তে রবীন্দ্রনাথের গানের
তন্ময়তা, বহু যুগের ওপারে বাঙ্ময় স্তব্ধতা।
সে যখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়
সবুজ লনে, ফুলগাছের পাতায় বৃষ্টি ধারা দেখে
ওর মনে পড়ে যায় কবেকার কোন-শূন্য মন্দিরের কথা,
মনে পড়ে সদ্য যৌবনের প্রথম শাড়ি পরে
কেমন নেচে উঠেছিল বৃষ্টিময় দুপুরে খোলা ছাদে,
নিজের অজান্তে ওর কণ্ঠে পল্লবিত হয়েছিল
বর্ষার মেঘমন্দ্রিত গান।

বর্ষা-আন্দোলিত সেই নারী তার শূন্য মন্দিরে
বসিয়েছে যে-কবিকে, বৃষ্টিধারায়, ভেজাপাতার ঘ্রাণে
সে-ও মোহিত, কিন্তু দীর্ঘকাল পুরোনো শহরে
বসবাস হেতু বর্ষার উদগ্র মাতলামি তার অসহ্য ঠেকে।
শহর-ভাসানো কলুষিত জল উজিয়ে হেঁটে আসা-যাওয়ার
পথের স্মৃতি তার মুখ আর মন ম্লান করে দেয় আজও।


আকাশ মেঘে-ঢাকা, তুমুল জলধারা দিচ্ছে ধুয়ে আজ শহরটিকে,
ভেজা দুপুরে দেখি পথিকহীন পথ, কাকেরা আশ্রয় খুঁজছে।
গহন বর্ষার ছায়ামেদুর গান গুঞ্জরিত মনে, শূন্য মন্দির এবং
কেমন হাহাকার বুকের প্রান্তরে বইতে থাকে হু হু রাত্রে।

যক্ষ নই কোনও, তবুও আষাঢ়ের কিংবা শ্রাবণের মেঘের ঘটা
হৃদয়ে ব্যাকুলতা সৃষ্টি করে আজও হঠাৎ চুপিসারে একলা ঘরে।
বাইরে চেয়ে থাকি, আকাশ জুড়ে তার মুখের ছায়া দেখি, অথচ
আমার এ বয়সে নেহাৎ বেমানান এমন ব্যাকুলতা, সত্যি।

কিন্তু বর্ষার এমনই মোহময় প্রভাব হায় ছোটো পড়ার গৃহকোণে দেখছি
আমার এই একাকীত্ব আর আমি বসেছি মুখোমুখি নিশ্চুপ।
শ্রাবণধারা মনে জাগায় তাকে কাছে পাওয়ার সাধ এই নিমেষে;
আমার বাসনা কি ছিন্নপত্রের মতোই ভেসে যাবে জলধারায়?

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 119

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts