Poem

কে তোমরা অভ্যন্তরে তাড়াতাড়ি সাজাচ্ছো চেয়ার
সারি সারি, দেখছো পর্দার রঙ ঠিক আছে কি না?
খানিক সাজিয়ে ফের এলোমেলো করে দিচ্ছো সব-
রঙিন সিল্কের পর্দা ছিঁড়ে,
চেয়ারের পাহাড় বানিয়ে খুব গল্পমগ্ন তোমরা এখন।
নাকি নৈঃশব্দই ভালবাসো?
কে তোমরা বাস্তবক মাথার বদলে ঘাড়ে শুধু
বন্ধ ঘড়ি নিয়ে বসে আছো মুখোমুখি অবেলায়?

আমার মগজে হো হো হেসে ওঠো তোমরা, কখনও
অত্যন্ত ফুঁপিয়ে কাঁদো বুকের ভেতর, সারাক্ষণ
রয়েছো অধীর প্রতীক্ষায়, যেন কোনো সুসংবাদ
আসবে এক্ষুণি।
সর্বদা চঞ্চল দৃষ্টি, কেউ আসে কি না, মানে কোনো
পিওনের ব্যাগ ভেসে ওঠে কি না, তারই দিকে লক্ষ্য
তোমাদের। এখনও আসেনি কেউ, কস্মিনকালেও
চকিতে তেমন কারো মৃদু
পদশব্দ বেজে উঠবে কি না, কে পারে বলতে?
কিন্তু আমি তোমাদের পরিচয় চাই, চাই জেনে নিতে কোন্‌
ডাকবাক্সে ফেলো চিঠি, কাদের সংসর্গে লাগে ভালো?
কেন বারবার
মেঘের ডানায় ঝুলে থাকো? গহন নদীতে কেন
উড়ন্ত টেবিল পেতে বসো অথবা মরুর বুকে
মধ্যরাতে জনহীনতায়
বের করো জ্যোৎস্নারাঙা হ্যাণ্ডনোট? কেমন বাজার
জমে ওঠে অকস্মাৎ, বালিয়াড়ি উম্মে কুলসুমি সুরে সুরে
বিশদ রঞ্জিত হয়, বালি ফুঁড়ে জাগো রাশি রাশি
কাচের গুঁড়োর মতো জলের ফোয়ারা, পুণ্যময়।
আমার ভেতর কে তোমরা ফিসফিস কথা বলো,
গোপনে ছড়িয়ে দাও বীজ, জল ঢালো? পাঁজরের
জমি ছিঁড়ে অগণিত চারা তোলে মাথা, যেন ওরা
অজস্র নিশান।
সতেজ রত্তিরে
লতাগুল্ম উন্মীলিত শরীরের দেয়ালে দেয়ালে।
কখনও আবার বুনোষাঁড়
ছেড়ে দাও আমার বুকের চৌরাস্তায়, করে সে চুরমার
সব কিছু; খেয়ে ফেলে তোমাদেরই দেওয়া কত ফুল।

কে তোমরা অভ্যন্তরে হার্ডবোর্ডে আঁকছো যেশাশ
আমারই আদলে আর বলছো কেবলি,-চলে যাও
চলে যাও তুমি?
অথচ আমি তো অন্তর্গত চারায় লাগিয়ে গাল,
আঙুলে ঘুরিয়ে দ্রুত কাচের প্লেটের মতো চাঁদ
এবং পায়ের নখ দিয়ে
নহর খুঁচিয়ে তুলে দ্বন্দ্বের দুন্দুভি শুনে আর
মীমাংসার অস্পষ্ট ট্রাফিক আইল্যাণ্ডে চোখ রেখে
প্রত্যহ আবৃত্তি করে আলোকের স্বর্গমালা চাই
থাকতে চাই।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 121

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts