Poem

কবির মিনতি

শামসুর রাহমান

থাকেন আপন মনে নিঝুম স্টাডিতে
নিমগ্ন পুস্তকপাঠে, কখনওবা কবিতা লেখায়। কয়েকটি
কবুতর রোজ তার আতিথেয়তায়
তৃপ্ত ওড়ে কাছের আকাশে
প্রফুল্ল ডানায়, ওড়ে রোদ্দুরের ঢেউ হয়ে। কবুতর
অকস্মাৎ রক্তধারা রূপে বয়ে যায় হাওয়ার চাদরে।

এ কেমন ভ্রান্ত কাল এল, ভাবলেন নিতি বই
থেকে দৃষ্টি সরিয়ে, মনের নানা স্তরে
নানান ভাবনা ভিড় করে। দৃষ্টিপথে
তার ভাসে সন্ত্রাসের রক্তচক্ষু, লালাসিক্ত জিভ,
রিক্সাচালকের শ্রমনিষ্ঠ শরীরে-ধরানো ক্ষিপ্ত আগুনের
মরণকামড়; চৌরাস্তায়, অলিতে গলিতে আজ
জাঁহাবাজ, উলঙ্গ অস্ত্রের স্বৈরাচার। এ কেমন
ভুল সময়ের বাঁকে দাঁড়ালেন তিনি? বড় প্রশ্নাকুল কবি।

বেদনার্ত, বিচলিত তিনি গোধূলিতে
পুস্তক, কবিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে বড় একা
নামলেন পথে, হেঁটে হেঁটে অস্ত্রের বাজারে এসে
থামলেন। একে একে সকল সফল
অস্ত্র-বিক্রেতার কাছে করজোড়ে অস্ত্রের বেসাতি
বন্ধের মিনতি জানালেন। সমবেত অট্রহাসির তরঙ্গে
কবির কাতর নিবেদন করুণ খড়ের কুটো,
তবু তার কণ্ঠে আজ কবিতার পঙ্‌ক্তি নয়, প্রার্থনার স্বর।

অস্ত্রের দোকানপাট আরও বেশি জ্বলজ্বলে, মুদ্রাস্ফীতি হয়,
কবির মিনতি শুধু অরণ্যে রোদন। অনন্তর
তাকে মারণাস্ত্রে তৈরি ক্রূসে বিদ্ধ করে
অসংখ্য খঞ্জরে অস্ত্র-বিক্রেতারা মাতে অপূর্ব প্রদর্শনীতে
আলোকসজ্জায়, নৃত্যগীতে মশগুল! ক্রুশবিদ্ধ, অসহায়
কবির বুকের রক্তধারা ঝরে ধূসর ধূলায়, বয়ে যায়
নর্দমায়। কবিতার পঙ্‌ক্তিমালা শোকগাথা হয়ে ঢাকে
কবির নিষ্পন্দ ক্ষতময় শরীর, দূরের আসমানে ঝোলে
নৈর্ব্যক্তিক চাঁদ, যেন ফাঁসি হয়ে গেছে ওর আর শহরের
গৃহকোণে একা অন্য নব্য কবি লেখে অস্ত্রবিরোধী কবিতা।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 110

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts