Poem

কবিতা-সন্ধ্যা

শামসুর রাহমান

এরকম ঘটে না প্রত্যহ, সকলেই জানে বটে,
যেমন দেয়ালে বসে শিস
দেয় না সুকণ্ঠ পাখি প্রতিদিন। ছিলাম দু’জন সন্ধ্যেবেলা
স্বপ্নাচ্ছন্ন ঘরে, খেলা করছিল আলো চতুর্দিকে।
টেবিলে সাজানো প্লেট, সোনালি চায়ের,
কেকের সুঘ্রাণ ভাসমান, আসবাবে শব্দহীন অলৌকিক
কোলাহল, অ্যালবাম থেকে
অতীত অর্মত্য কণ্ঠে গেয়ে ওঠে গান ক্ষণে ক্ষণে
পুরুষানুক্রমে,
বিভিন্ন পর্যায়ে তুমি নানা ফুলের একটি মালা।
আমাদের স্বরচিত দ্বীপ গুঞ্জরিত দূরাগত নাবিকের
গানে, আমাদের
সংলাপে অতীতে ছিল, ছিল বর্তমান,
ছিল স্মৃতি-জাগানো তরঙ্গ, গাছগাছালির আন্দোলন আর
ফুলের পরাগ, বড়ে গোলামের তান, লয়কারি।
তোমার পরনে ছিল ঘাসরঙ শাড়ি,
কপালে মেরুন টিপ, যেন নীপবনে বসে তুমি
খাতা খুলে পড়ছিলে ঈষৎ মোহন
দুলে দুলে সদ্যলেখা কবিতা তোমার। শব্দগুলি,
রঙবেরঙের, প্রজাপতি, সত্তার গহন থেকে
কী সহজে উড়ে যায় দূরে কোথাও, হৃদয় ছুঁয়ে
গেল ওরা আমার ভেতরকার সমালোচকের
মুখ বন্ধ করে,
আশ্চর্য তোমার কণ্ঠস্বরে যেন জ্যোৎস্নাপ্লুত ঝর্ণার নিবাস।
আমি মূক রইলাম তাকিয়ে কিছুক্ষণ
তোমার চোখের দিকে, যে-চোখে বনের নীলাঞ্জন,
হ্রদের সৌন্দর্য, দিগন্তের ব্যাপকতা। মুগ্ধাবেশে
দেখলাম তোমার বাগান
কী করে যে ঘরের ভেতরে চলে এল। মনে মনে
উচ্চারণে মর্মরিত আমার হৃদয়-
আসুক তোমার কবিতায় ভোরবেলাকার রোদ,
যেমন তোমার ঘরে আসে
শারদ রোদ্দুর, স্মিত ফুটুক গোলাপ,
যেমন সুন্দর ফোটে তোমার বাগানে নিরিবিলি। সিঁড়ি দিয়ে
নামতে নামতে মনে হলো, জানানো জরুরি ছিল
কিছু কথা তোমাকে, অথচ পরমুহূর্তেই ভাবি,
কী দরকার জানাবার? থাক ওরা প্রচ্ছন্ন সেখানে
দূরত্বের স্তব্ধ গুঞ্জরনে
বাগানের পত্রগুচ্ছে, ফুলে, ঘাসে স্বপ্নময় দীর্ঘশ্বাস হয়ে।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 189

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts