Poem

কত অগ্নিবলয় পেরিয়ে

শামসুর রাহমান

একদা আমারও ছিল জ্বলজ্বলে যৌবনের কাল। যৌবনের
প্রত্যুষে ভেবেছি, হেসে খেলে,
খাতার সফেদ পাতা জুড়ে মাঝে মাঝে
সযত্নে সাজিয়ে কিছু শব্দের মিছিল
রঙিন সিল্কের মতো কেটে যাবে মসৃণ আমোদে
জীবন আমার বসন্তের পুষ্পঘ্রাণে, প্রেমঘোরে।

তখন ভাবিনি মোটে জনকের প্রশ্রয়, আশ্রয়
কত ক্ষণস্থায়ী, কত খটখটে, নিষ্পৃহ, নির্দয়
পরিবেশ; প্রতি মোড়ে ছদ্মবেশী আততায়ী ওঁৎ পেতে থাকে
কুটিল সংঘের নির্দেশনা প্রশ্নহীন, শর্তহীন মেনে নিয়ে
প্রতিবার। ঢের ঝড়জল
বয়ে গেছে মাথার ওপর আর বহুরূপী ভর্ৎসনা, যন্ত্রণা
সইতে হয়েছে নানা মহলের। অথচ নিজস্ব বিশ্বাসের
মাটি থেকে আজ অব্দি এক চুলও দাঁড়াইনি সরে।

বারবার কত অগ্নিবলয় পেরিয়ে
এসেছি ঝল্‌সে-যাওয়া দেহমন নিয়ে। যন্ত্রণায়
হয়েছি কাতর সত্য, অথচ কখনও নিরাশার পাখসাটে
যাইনি তলিয়ে পাতালের
অতল তিমিরে। শুভ আলো, যত ক্ষীণ হোক, পথ
দেখিয়ে এনেছে প্রতিবার; দেহ মনের জখম সেরে গেছে
ফুল, পাখি, শুকতারা এবং নারীর শুশ্রূষায়। কণ্টকিত
পথে হাঁটা এখনও হয়নি শেষ, রয়ে গেছে ঢের
ধূর্ত ফাঁদ আর অগ্নিবলয় এখনও। পারবো কি
অভীষ্ট সে বৃক্ষের অনন্য
ছায়ায় দাঁড়াতে, বোধি যার নাম? অন্ধদের ভিড়ে
পারবো কি নির্ভয়ে করতে উচ্চারণ আলোকিত কথামালা?

এখনও হাঁটছি দ্যাখো, হেঁটে যেতে হবে, যতই নামুক চোখে
ক্লান্তির কুয়াশা আর ছায়ারা দেখাক ভয়। এই তো অদূরে
প্রতিভাত ঝলমলে সরোবর গোধূলিতে, অপরূপ এক
নীলপদ্ম বুক খুলে দুলছে সেখানে
ছড়িয়ে প্রশান্ত আভা। পারব কি তুলে নিতে ওকে
সরোবর থেকে? হায়, আমি তো ভুলেও
শিখিনি সাঁতার কোনওকালে। বাস্তবিক
নিয়মিত তীরে এসে তরী ডোবা আমার নিয়তি।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 110

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts