Poem

খর রৌদ্রের নিথর প্রহরে
শ্রাবণের ঘন মেঘ দেবে বলেছিলে।
তৃষিত চোখের আর্তি ঝরিয়ে
চেয়ে থাকি দূর অসীম শূন্যে, নীলে।

ঘন সমারোহে পুঞ্জ পুঞ্জ
মেঘের জটলা দূর আকাশের পাড়ে;
যেন একপাল কালো মেঘ তেড়ে
লাফ দিয়ে পড়ে শুভ্র মেঘের ঘাড়ে।

হৃদয়ে মরুর বালি ওড়ে আজ,
দারুণ তৃষ্ণা রুক্ষ সত্তা জুড়ে।
ছায়া খুঁজে ফিরি পাথুরে মাটিতে,
কখন যে মেঘ বাতাসে গিয়েছে উড়ে।

দুপুর-রৌদ্রে তোমার ছায়ায়
নিজের ছায়াকে সহযে মিলাতে চাই।
কোন্‌ সে আগুন শুষে নিয়ে গেছে
স্নিগ্ধ ছায়াকে-পড়ে আছে শুধু ছাই!

হাজার যুগের প্রেমিকের কতো
বাসনা দগ্ধ হৃদয়ে বেঁধেছে বাসা-
সেই গুরুভার বই দিনরাত,
পথের ক্লান্তি ভোলায় ছায়ার আশা।

গৌরাঙ্গীর দেহের বাগানে
চোখের লুব্ধ ভ্রমরের জয়গান।
শিরায় শিরায় সেতারের ঝালা,
রক্তের প্রতি কণা চায় মহাদান।

জ্বলজ্বলে দুটি স্বর্ণ কুম্ভ
কানায় কানায় যৌবন-জলে ভরা।
জীবনের স্বরে ছলকিয়ে ওঠে,
সীমাহীন পথে সে-জল ক্লান্তিহরা!

স্নান সেরে এলে কুন্তল ধারা
ঝরতো একদা গুরু নিতম্ব’ পরে।
কালিয়া আঁধার কনক চাঁদার
শরণ নিতো যে-তা-ও আজ মনে পড়ে!

আমার প্রাণের খর বৈশাখে
মেঘে মেঘে আনো বিপুল বৃষ্টিধারাঃ
হৃদয়ের কূলে সিক্ত হাওয়ায়
কাশফুল হবে খুশিতে আত্মহারা।

কতকাল আর কাটাবো বিষাদে
দিনরাত শুধু স্মৃতি সম্বল করে?
মাঝ মাঝে তাই বিচ্ছেদ ভেবে
বেহুঁশ বেতাল নামি নরকের ঘরে।

দৈব দয়ায় বহুকাল পরে
হয়তো আসবে মিলনের মহাক্ষণ।
কিন্তু তখন কোন্‌ বনে, হায়,
হরিণ-ক্ষিপ্র তোমার সে যৌবন?

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 118

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts