Poem

মদ্যপদের মধ্যে

শামসুর রাহমান

মদ্যপদের মধ্যে বসে আছে সে চুপচাপ
অনেকক্ষণ ধরে। হাত দু’টো টেবিলে ন্যস্ত, মাথা নিচু।
অন্যেরা কেউ কারো কথায় কান না দিয়ে
বেজায় হৈ হল্লা করছে, খিস্তি খেউড়ের
ডেকেছে বান। দূর থেকে কেউ দেখলে ওকেও
মনে হবে মদে চুর, ঝিম মেরে বসে আছে।
অথচ নেশাভাঙ কিছুই করে নি সে। শুধু সঙ্গ দিচ্ছে
ঘন্টার পর ঘন্টা ইয়ারবক্সিদের।
রাত এগারোটায় চেয়ারে ঠায় বসে অন্য এক মস্তিতে
নিমজ্জিত। তবে কি সে ফেরেশ্‌তাদের সঙ্গে মনে মনে
তর্ক জুড়ে দিয়েছে পারিপার্শ্বিকের প্রতি
সম্পূর্ণ উদাসীন? নাকি ভাবছে হুরপরীদের
স্তন স্পর্শ করলে একজন মানুষ
কীরকম অনুভূতির সরোবরে কাটতে পারে ডূবসাঁতার?

না, সে এরকম কিছুই ভাবছে না এখন।
ওর মাথায় বন বন ঘুরছে সাঙাতদের কথা,
যারা নেশায় বুঁদ।
ওদের সে ঘেন্না করে না; ওরা, সে ভাবে,
প্রত্যেকে পাথরে ছিট্‌কে-পড়া
বিন্দু বিন্দু রক্ত। মিথ্যার তুবড়ি-ছোটানো কতিপয়
চেনা মুখমণ্ডলের অশ্লীল ভঙ্গি দেখে দেখে,
নিত্যদিন প্রবঞ্চনার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
প্রত্যক্ষ করে, হাড়-ফাটানো জুলুমের প্রতি দর্পিত
শিরস্ত্রাণের সায় লক্ষ করে
ওরা হতাশা ও বেদনায় ক্রমাগত লগি ঠেলতে ঠেলতে
এগোচ্ছে সর্বনাশের মোহনায়।

ওরা নীড়পোড়া পাখির ঝাঁক, কালবেলায়
জড়ো হয়েছে এই হতচ্ছাড়া আসরে। কেউ বিড় বিড় করে
কী যেন একটা বলতে চাইছে, কেউবা ঘুমের ঢুলু ঢুলু।
সে ওদের ভালোবাসে; কিছুতেই ছেড়ে যেতে
পারে না, প্রতীক্ষায় থাকে-
যদি কখনো হঠাৎ নেশার রঙিন কুয়াশা
অপসৃত হবার পর ওরা দেখতে পায় ওদের সামনে
সুন্দরীর মতো উন্মোচিত ভবিষ্যৎ।

এক সময় গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে, আঙুল চালায়
লম্বা চুল, মনে হয় একজন গেরিলা
তৈরি হচ্ছে নতুন কোনো
অ্যামবুশ্‌-এর উদ্দেশ্যে। ওর চোখ দু’টো মণিরত্নের মতো
জ্বলজ্বলে; এমন কান্তিমান পুরুষ
কোথাও কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 122

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts