Poem

নিজেকে নিয়ে পঙ্‌ক্তিমালা

শামসুর রাহমান

আমি তো অনেক আগে একটি মাটির ঘরে ভোরে
প্রথম মেলেছিলাম চোখ মিটিমিটি,
অথচ কাঁদিনি একরত্তি গুরুজনদের শত
চেষ্টাকে বিফল করে দিয়ে। পরবর্তীকালে দুটি
চোখ থেকে ঢের পানি ঝরবে বলেই সম্ভবত
সে আঁতুড়ঘর ছিল বড় সুনসান।

যদিও পুরোনো এক গলির ভেতরে জন্ম আমার, ক্রমশ
সময়ের দ্রুত পদধ্বনি
আমাকে এগিয়ে নিয়ে পৌঁছে
দিয়েছে সম্মুখে, বেছে নিয়েছি সঠিক ডেরা আর
গেয়েছি দরাজ কণ্ঠে গান কত না আসরে। চোখে
ছিল স্বপ্ন ভাবীকাল এবং সফল জীবনের,
যে জীবন সৌন্দর্য এবং
শান্তির আভায় সুশোভিত।

যখন জীবন ছিল যৌবনের সতেজ আলোয় ঝলসিত
প্রগতির নিশানে শোভিত আর মিছিলের দীপ্র
আহ্বানে অধীর, একদিন নাদিরার অপরূপ
ভাষণ আমাকে রাজপথে বাহুদ্বয়
উঁচিয়ে স্লোগান দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে বারবার। আজও সেই
স্মৃতিটুকু জ্বলজ্বলে দুপুরে দূরকে নিকট করে বড়।

এখনো তো বাংলার চোখ থেকে অনিবার জল
ঝরে দিনরাত, বুক তার বর্বরের
দংশনে রক্তাক্ত অতিশয়। নতুন নাদেরা কোনো
নিয়েছে পতাকা হাতে প্রবল কাঁপাচ্ছে রাজপথ,
পুলিশের লাঠির প্রহারে তপ্ত পিচঢালা পথে
পড়ছে লুটিয়ে, ফের মাথা তুলে উঠছে দাঁড়িয়ে
অপরূপ মিনারের মতো। মিছিলে শরিক হতে
প্রৌঢ়ত্বেও কুণ্ঠাহীন এই আমি দেশ ও দশের কল্যাণের প্রয়োজনে।

আমার শরীর আজ নিরন্তর কালের প্রহারে
খুব ক্ষত-বিক্ষত, অথচ মন যুবার মতোই
সতেজ, নতুন বাগানের শোভা বাড়ানোর স্পৃহা
সর্বদা জাগ্রত-সব বাধা বিপত্তি উজিয়ে
যেতে চাই দূরে, বহুদূরে প্রগতির
পতাকা-শোভিত এক শান্তিময় জগতের দিকে-বুঝি তাই
কখনো নক্ষত্র-দীপ্ত আকাশে, কখনো মাটিতেই বেশি থাকি।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 1392

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts