Poem

পারেনি খুবলে খেতে সৌন্দর্যকে

শামসুর রাহমান

এইতো কিছুদিন ধরে কী-যে হয়েছে আমার, পাড়ার
না, না, শুধু পাড়ার নয়, প্রিয় এই শহরের সব একতলা, দোতলা
বাড়ি, দশতলা, এগারো তলা ফ্ল্যাট মুখ থুবড়ে
পড়েছে এখানে-সেখানে। অগণিত ধ্বংসস্তূপ
এবং বৃক্ষবিরল এই শহরের প্রতিটি গাছ
ভীষণ ক্রুদ্ধ কঙ্কাল যেন। নিজেকেই কেমন
অদ্ভত খাপছাড়া মনে হয়, যেন আমি সুদূর
কোনও শতাব্দী থেকে আচমকা এসে পড়েছি এখানে।

পুড়ে যাচ্ছে কেশরপ্রায় আমার চুল, পুড়ছে ভীষণ
আমার চোখ, মুখ, সারা শরীর
পুড়ছে, পায়ের তলার ন্যাংটো জমিন
আগুন-ঝরানো দগদগে ঘায়ের মতো তামা। পুড়ে যাচ্ছি,
আবার সেই সুদূর হাজার শতাব্দী আগের এক দুপুরে
অগ্নিবৃষ্টিতে ভস্মে রূপান্তরিত হয়েছিলাম যেমন। দৃষ্টি
থেকে মুছে গেছে দু’ দেশের সীমানায় অস্ত্রের ধমক, গায়েব
জাতিসংঘের নানা জাতির ভাষণ, ক্ষুদে দেশের বিলাপ।
এইতো নতুন শতাব্দীর শুরুতেই দেখছি আধপোড়া আমার
দিকে আবার তেড়ে আসছে ডাইনোসর, এক্ষুণি
গিলে ফেলবে আমাকে। আমি কি ছুটে যেতে পারবো
কোনও নিরাপদ গুহায়? দেখতে পাবো কি সেখানে কোনও
কোমল আলিঙ্গনের মোহিনী মুদ্রা? এইতো পায়ের তলায়
মৃত্তিকা কম্পমান, অদূরে পর্বত মুহুর্মুহু উগরে দিচ্ছে
আগুন; ফাঁক-হয়ে-যাওয়া জমিন গিলে ফেলছে
অগণন নর-নারীকে। প্রলয়ের কী উন্মত্ত নাচন!

ছুটছি আমি, ছুটছি প্রাণপণে নতুন মৃত্যুর দাঁত-নখের
সন্ত্রাস এড়ানোর আশায়। ছুটছি ছুটছি ভীষণ একা,
নিঃশ্বাস দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, তবুও ছুটছি ছুটব। হঠাৎ দেখি,
কাছেই ভস্মস্তূপে কী তাজ্জব, তিনটি গোলাপ দুলছে
হাওয়ার চুমোয়, হাসছে নির্মল
অথচ রহস্যময় হাসি। জন্মান্ধ তাণ্ডবের
উৎকট চিৎকার, অপ্রতিরোধ্য ঝোড়ো ঝাপ্টা পারেনি
সেই হাসি মুছে ফেলতে, পারেনি খুবলে খেতে সৌন্দর্যকে।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 143

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts