Poem

প্রতীকী চিত্রের মতো

শামসুর রাহমান

ভোরে চোখ মেলে দেখি ঘরের দেয়ালে
রোদ্দুরের নক্‌শা ঝুলে আছে
প্রতীকী চিত্রের মতো আর
নারকেল গাছের ডালটা,
আলোর লেবাস-পরা, জানলার গ্রিলে
সবুজ চুম্বন আঁকে। হাওয়া দিচ্ছে; ডালটার সঙ্গে, ইচ্ছে হলো,
হ্যান্ডশেক করি, যে-ইচ্ছের গ্রীবাটিকে খুব
সন্তর্পণে খর্ব করে রাখি
কতিপয় লোকের বেলায়।

গর্বের ব্যাপার নয়, তবু
এ রকম অন্তত নিজের কাছে ফিসফিস করে
বলতেই হয়,
যেমন পুরাণে আছে গর্তে মুখ রেখে একজন
অন্তরালে বলেছিল কথা।

হঠাৎ বিছানা ছেড়ে দাঁড়াই ঘরের মাঝখানে;
কোনো পাখি কিংবা কোনো ফুল
কবিতার পক্ষে বেশি সহায়ক ভাবতেই শুনি
বুকের ভেতর

দোয়েল কোকিল ডেকে ওঠে, ফোটে গোলাপ, অর্কিড।
অথচ এখন আমি নতুন পাখির খোঁজে আর
অভিনব ফুলের সন্ধানে
ঘরের নিভৃত কোণে কাটাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ঘুরে আসি
শহরের চেনা,
অচেনা অনেক রাস্তা থেকে, দূর গ্রাম,
গ্রহ-গ্রহান্তর থেকে, আখেরে দেয়ালে
দৃষ্টি রেখে বসে থাকি, যদি
ইট আর সিমেন্টের ত্বক ফুঁড়ে কোনো
সম্পূর্ণ অঞ্জাত ফুল অথবা অচেনা
পাখি বের হ’য়ে আসে, যদি
কারো অঞ্জলিতে পেয়ে যাই
দেবদূতদেরকেও ঈর্ষাতুর করে তোলা কোনো
নব্য সওগাত।

একটি পুরোনো চিঠি পড়ার সময়
দেখি খোলা দরজায় জলকন্যার ধরনে শুয়ে
আছে কবিতার পঙ্‌ক্তি, লেজের সোনালি
আঁশ থেকে চুইয়ে চুইয়ে পড়ে স্বপ্নমুক্তো, আর
আমার অনেক আগেকার
যূথচারী পুর্বপুরুষের স্মৃতি। ভাবি
অপসৃত হবার আগেই
প্যাডে তুলে রাখা ভালো। কী যেন বলতে
চাইল সে, কবিতার পঙ্‌ক্তি, অথচ ওষ্ঠের কাছে
শত পাথরের নুড়ি এসে
করে ভিড়; কিছুই না বলে
জলকন্যা দরজার চৌকাঠ পেরিয়ে
আমার ভেতরে এক পবিত্র আগুন
ধরিয়ে নিমেষে চলে গেল। সারা ঘরে হাহাকার
বেহালার করুণ সুরের মতো ঝরে,
এবং টিবিলে ঝুঁকে কয়েক দিনের
পাতাজোড়া কাটাকুটি থেকে
একটি নিঃসঙ্গ হরিণকে মৃগনাভিসুদ্ধ বের
করে নিয়ে আসি, দেখি তার টলটলে
চোখে কাঁপে জন্ম-জন্মান্তর।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 105

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts