Poem

সেই অঘ্রানের রাতে

শামসুর রাহমান

সেই অঘ্রানের রাতে
কী যেন থাকবে, তুমি পারবে না কিছতে ঘুমাতে;
এমনকি ব্যর্থ সেডাক্‌শিন; বারান্দায়
বড় একা বসবে জ্যোৎস্নায়
চোখ মেলে, ক্যাসেট প্লেয়ারে দেবব্রত
নিমগ্ন ইমন, তুমি বনপোড়া হরিণীর মতো
ছুটবে ঘরের দিকে, হয়তো আমি তখন কবরে
নিরস্তিত্ব আর অস্তিত্বের ভিন্ন স্তরে!
তুমি মনে রেখেছো কি রাখো নি আমাকে,-অর্থহীন
এই প্রশ্ন বস্তুত সেদিন।
তবু জেনে নিতে সাধ হয়, আগামীর রৌদ্রজলে
তোমার হৃদয় কাকে কোন্‌ কথা বলে?
পুরো স্পিড়ে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে
বইয়ের র্যােকের কাছে নিঃশব্দে এগিয়ে
যাবে, এলেবেলে খুঁজে একটি রোগাটে বই তুলে
ধুলো ঝেড়ে পাতা খুলে
জ্বালিয়ে টেবিল ল্যাম্প চোখ
বুলোবে আমার কবেকার পদ্যে, অতীতের নখ
তোমার নরম বুকে কাটবে আঁচড়,
মনে হয়, নাকি মেনহুইনের বেহালার ছড়
তোমাকে ভুলিয়ে নিয়ে যাবে
অন্য পথে জ্যোৎস্নাপ্লুত সুরের প্রভাবে?
তোমার পায়ের কাছে পড়বে লুটিয়ে দূর নীল
জল-ছোঁয় অতীত-কাতর গাংচিল।
পুরোনো রোগাটে বইটিতে হাত রেখে,
অস্পষ্ট স্বপ্নের মত নক্ষত্রের ভিড়ে মুখ ঢেকে
বলবে রাত্রির কানে তুমি, ‘এই কবি,
ছন্নছাড়া, একদা আমাকে নিয়ে ভৈরবী, পূরবী
আর দরবারী কানাড়ার রূপময়
ছবি এঁকেছিল কী তন্ময়,
মেতেছিল অধরাকে ছোঁয়ার খেলায়
রোদপোড়া জীবনের অস্থির বেলায়।
হয়তো ভেবে তুমি নিশ্চুপ, কী বোকা।
তখন আমার নেই অতীত অথবা বর্তমান
ভবিষ্যৎ, তবু আসবো গাইবো স্বরহীন গান।
সেই অঘ্রানের রাতে
ক্লান্ত হয়ে অবশেষে যাবে বিছানাতে,
পাশে নিদ্রা আর পুরুষালী ঘ্রাণ, টিপে
দিয়ে বেড-সুইচে বালিশে মাথা রাখবে, সুদূর কোনো দ্বীপ
চকিতে উঠবে জেগে। ঝর্ণা, টিলা,
অন্তরাগময়, আদিবাসী নাচ, ধনুকের ছিলা
পাকদণ্ডী, মহিষের মুণ্ডু, পদচ্ছাপ,-
প্রতীক্ষাকাতর কেউ গোলাপ বাগানে, ফটোগ্রাফ
ঝরে অ্যালবাম থেকে ক্রমাগত-
টেবিলে রোগাটে হল্‌দে বইটির পাতা উড়বে স্মৃতি মতো।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 131

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts