Poem

শান্তির এলাকা

শামসুর রাহমান

তবু, তবু, ধন্যবাদ জানাই তোমাকে, সবাইকে।
যখনই বাড়াই হাত হাতের সান্নিধ্যে,
শীতের সাপের স্পর্শ পাই কিংবা মনে হয় কোনো মাঘ-নিশীথের
জানালা ছুঁয়েছি ভুল করে,
যাকে আলিঙ্গন করতে যাই তার ছায়াও থাকে না কাছে।
যখন কারুর সঙ্গে কথা বলবার পুষ্পল স্পৃহায়
জলতরঙ্গের মতো বেজে ওঠে আমার ব্যাকুল সত্তা, আমি
কথোপকথনের লোভে প্রতীক্ষায় থাকি,
কখনো পাই না সাড়া, যেন পাথরের সঙ্গে জুড়েছি আলাপ।
বার-বার ক্ষেতে গিয়ে দেখি
প্রতিবার দেরি করে ফেলেছি বিষম,
আমার হাতের বীজ হাতেই বেবাক থেকে যায়, হয় নাকো বোনা।
তবু, তবু, ধন্যবাদ জানাই তোমাকে, সবাইকে।

সকাল বেলায় আমি দাড়ি কাটার সময় দেখি,
বিবর্ণ সংবাদপত্রে জাতিসংঘ ক্লিষ্ট নপুংসকের মতন
উবু হয়ে ব’সে আছে;
দেখি মুক্তিযুদ্ধের পুরোনো ফটোগুলো নিষ্পলক;
জানালায় এক পাল লাল পিঁপড়ে একটি পোকার
শব বয়ে নিয়ে যাচ্ছে আস্তে-সুস্থে যৌথ
ভোজের উৎসবে।
চকিত সে কার মুখ নিয়ে এলো রাত্রিময় জানালা এবং
নিঃসঙ্গতা, যা আমি সহজে ছুঁতে পারি?
কোথায়ও এমন জায়গা নেই এতটুকু, যেখানে অষ্টপ্রহর
আশান্তির ধেই ধেই নৃত্য নেই, নেই বিরোধের
কাড়া-নাকাড়ার হট্ররোল।
আমার ভেতরে পাখি-পাখিনীর মদির চঞ্চুতে
চঞ্চু রাখে, জেগে থাকে পোকামাকড়ের
প্রচ্ছন্ন সমাজ,
আমার ভেতরে সাদা খরগোশ হেসে খেলে বেড়ায় কেমন
ঘাসে ঘাসে, খড়ের গাদায়;
বিভিন্ন মরাল ওড়ে একটি মরাল হয়ে আমার ভেতর।
অশান্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার
হৃদয়কে আজ শান্তির এলাকা ঘোষণা করছি।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 143

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts