Poem

জনস্মৃতি থেকে উঠে-আসা
বহু লোককাহিনীর একটি এরূপ-
একদা সুফলা এক রাজ্যে দিকে দিকে
রটে গেল এই বার্তা, রাজা আর তার
সভার অমাত্যবৃন্দ ছাড়া কে সবচে’ ঐশ্বর্যশালী
তার বিচারের ভার অর্পিত দানেশমন্দ এক
প্রবীণের ওপর, ফলত এইমতো
একদিন শুরু হলো বহুপ্রতীক্ষিত সে বিচার।

লোক থৈ-থৈ বিচার-সভায় সমাসীন বিচারক,
প্রবীণ দানেশমন্দ; সেখানে এলেন একে একে
তিনজন সর্বাপেক্ষা বেশি ঐশ্বর্যের দাবিদার।
প্রথমজনের দাবি-সাতটি জাহাজ তার ভাসে
সপ্তসিন্ধুময় বাণিজ্যের টানে, টাকার পাহাড়
গড়েছেন তিনি সুখে নানান বন্দরে।
তার চেয়ে অধিক ঐশ্বর্যশালী নেই কেউ এই নগরে।

দ্বিতীয়জনের পদক্ষেপ ছিল খুব
ঠিকঠাক এবং গম্ভীর, তিনি বটে অগণিত
পুস্তকবিহারী আর টীকাভাষ্যে তার
জীবনের প্রতিটি প্রহর ভরপুর, ফলে তিনি
নারীর প্রণয় তুচ্ছ করে ঘর-গেরস্থালি
বিসর্জন দিয়ে থেকেছেন বিদ্যাপীঠে আর মাঠে
আজীবন; এখন এমন জ্ঞান-তাপসের দাবি-
কেবল তিনিই সর্বাধিক ঐশ্বর্যের অধিকারী।

অতঃপর বিচার-সভায় একজন আলাভোলা,
ঈষৎ বিব্রত লোক বলে নম্রস্বরে,
‘আমার জীবন লগ্ন শব্দরাজিতেই,
দেখুন আমার মুখে পায়রা, দোয়েল, বুলবুলি,
গোলাপ, মালতী, নিশীথের পথরেখা, নদনদী
জলকন্যা, বনরাজি, নক্ষত্রের ছায়া;
আমাকেই ভালোবেসে ভালোবেসে একজন নারী
প্রাণ দিতে প্রস্তুত, আমার কোনও দাবি-দাওয়া নেই।‘

প্রবীণ দানেশমন্দ বিচারক প্রত্যেকের কথা শুনে শেষে
নীরবে তৃতীয়জনকেই সর্বাধিক
ঐশ্বর্যবানের কাঙ্ক্ষনীয়
শিরোপা অর্পণ ক’রে নগ্নপদে হেঁটে যান দূরে, বহুদূরে।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 131

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts