Poem

হাওয়ায় হাওয়ায় দুঃসংবাদ প্রতিদিন, প্রতিরাত্রি
শব্দহীন মর্শিয়ায় কেমন শীতল
সমাচ্ছন্ন, অত্যন্ত বিধুর। কে কোথায় গুম খুন
হয়ে যায়, মেলে না হদিস। লোকজন
পথ চলে, অবনত মাথা, যেন মৃতের মিছিল
সকাল সন্ধ্যায়। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সন্দেহভাজন অকস্মাৎ
কখনো গভীর রাতে যাত্রাবাড়ী, গ্রিন রোডগুলির ধমকে
কেঁপে ওঠে, কখনো-বা বুড়িগঙ্গা নদীর সুশান্ত
প্রতিবেশী গ্রাম দন্ধ, আহত গাছের
ডালে ঝোলে বৃদ্ধ মৃতদেহ। আলে রক্তরাঙা শাড়ি। বন্দুকের
নলের হুকুমে গ্রাম্যজন নেয় মেনে অবরুদ্ধ যন্ত্রণায়
যান্ত্রিক কাতারবন্দি মৃত্যু।

সহসা শহরে কারফিউ, সবখানে
সন্ত্রাস দেখলদার। পাড়ায় পাড়ায় ঢুকে পড়ে
নরকের ডালকুত্তাগুলো; সঙ্গে নেড়ী
কুকুরের দল, ধার-করা তেজে আপাত-তুখোড়।
ঘরে ঘরে জোর
চলেছে তল্লাশি। মারণাস্ত্র খোঁজে ওরা
অলিতে গলিতে, গাছতলায়, আড়তে,
ছায়াচ্ছন্ন প্রাঙ্গণে, পুকুরে এমনকি
বনেদী ভবনে
খোঁজে রাইফেল
গ্রেনেড, মেশিনগান, মুক্তিফৌজ, বিদ্রোহী তরুণ।

খাঁচার টিয়েটা
সবুজ চিৎকারে দিচ্ছে গুঁড়িয়ে অদ্ভুত
স্তব্ধতার ঘাঁটি; টবে উদ্ভিন্ন গোলাপ
ভীষণ ফ্যাকাশে ভয়ে। হঠাৎ কপাটে
বুটের বেদম লাথি, হাঁক-ডাক। তুই-তোকারির
ডাকে বান, নিমেষে উঠোনে
খাকি উর্দি কতিপয়; মরণলোলুপ রাকবাইন
গচ্ছিত সবার কাঁধে, কারোবা বাহুতে
চওড়া সবুজ ব্যাজ। ভয়-পাওয়া জননী তাকান
তরুণ পুত্রের দিকে, লাফাচ্ছে বাঁ চোখ
ঘন ঘন; বিমূঢ় জনক প্রস্তরিত
তরুণী কন্যার হাত ধরে ত্রস্ত খুব,
ঘরের চেয়েও বেশি নিরাপদ আশ্রয় খোঁজেন
দিগ্ধিদিক। যদি পারতেন
আত্মজ ও আত্মজাকে
রাখতেন লুকিয়ে পাতালে
নক্ষত্রবীথির অন্তরালে কিংবা রক্তকণিকায়,
হৃদয়ের গহন স্পন্দনে।

পাড়ায় পাড়ায় ওরা মাতে অস্ত্রোদ্ধারে,
নিত্য করে তছনছ যখন যা খুশি।
শহরের খাঁ খাঁ বুকে চেপে ধরে বুট,
ঘাতক সঙ্গিন।
লুকানো অস্ত্রের লোভে ওরা বার বার
দেয় হানা মহল্লায় মহল্লায়, খোঁজে
শস্ত্রপাণি যত্রতত্র শমীবৃক্ষ
বাংলাদেশের হৃদয়ে হৃদয়ে
ঝলকিত। চোখগুলো গ্রেনেডের চেয়ে
বিস্ফোরক বেশি আর শূন্য কোটি হাত
যতটা বিপজ্জনক, ক্রূর মারণাস্ত্র নয় তত।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 209

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts