Poem

সকাল থেকে সন্ধ্যা

শামসুর রাহমান

সকাল থেকে সন্ধ্যা আর সন্ধ্যা থেকে সকাল একজন লোক
কী-যে করে, সবাই
ভারি তাজ্জব। বোঝা যায়, ওর ঝোঁক
কেবলি পালিয়ে বেড়ানোয়;
কিছু একটা খোঁজা ওর চোখ দুটোয়
মানচিত্র দিয়েছে এঁকে। ‘এই ভাই
কেন তোমরা এমন স্বভাব’ এ-কথা কেউ কেউ জিজ্ঞেস করতে
গিয়েও থম। কলতলায় পানি ভরতে
তাসা আইবুড়ো মেয়ে,
যার গা বেয়ে
যৌবন ঝরছে ব্যর্থতায়, চা-খানার ছেঁড়া হাফ-প্যান্ট-পরা
ছেলেটা, মনিহারি দোকানদার
আর ছেলেভোলানো ছড়া
কেটে বেড়ানো বুড়ো, যার
হাওয়া-ওড়া চুলে
মেহেদির ছোপ,
‘এই দুনিয়া পায়রার খোপ
বৈ তো নয়’ শব্দগুলো যে ফকিরের কণ্ঠে বাজে,
তারা প্রত্যেকেই লোকটার গতিবিধিকে প্রশ্নাধীন করে তুলে
ফের মন দ্যায় নিজ নিজ কাজে।

লোকটা কখনো ফুটপাতে, কখনও টানেলে,
কখনোবা ময়দান ছেড়ে নক্ষত্র-ছাওয়া পথে খুব একা
চুপিসারে পা ফেলে
এগোয়, যাতে কারো সঙ্গেই দেখা
না হয়, কখনো ভোঁ দৌড়ে গলির ভেতর
উধাও বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায়। অষ্টপ্রহর সবার চোখে ধুলো
দিয়ে খোঁজে ঘরের ভেতর ঘর।
পাড়ার রঙ-বেরঙের লোকগুলো
জানে লোকটা কারো কোনো ক্ষতি
করবে না কিছুতেই। হাতে কখনো লাঠি
নেয় না তুলে, দা কুড়োল নদারৎ,
গলায় খেলিয়ে স্বর্ণচাঁপা জাগানো গৎ
পথ হাঁটে, নাড়ে না তুখোড় ভঙ্গিতে কোনো কলকাঠি;
তবে বোঝা দায় তার মতিগতি।

লোকটার মুখের আদলে
কেউ কেউ বলে, রহস্যের তুলি বুলিয়ে দিয়েছে অচিন
রঙ, আসলে
সে লোকচক্ষু থেকে সারাদিন,
সারা রাত কষ্টেসৃষ্টে আগলে রাখে
ধুকপুক বুকে নিজস্ব কিছু স্বপ্ন, যেমন বিপদে কান-খাড়া পাখি
তার শাবকগুলোকে ঢাকে
পাখায়। আমি, সত্যি বলতে কী, নিগেটিভ ছবির মতো
লোকটার পাশেই থাকি,
আমার হাতের চেটোয় তার বুকের রক্ত ঝরে অবিরত।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 360

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts