Poem

সৃষ্টির মুহূর্ত

শামসুর রাহমান

ইদানীং গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায়, যেন কেউ
হঠাৎ ধাক্কায় জাগিয়ে দেয় আমাকে
তামাশায় মেতে। আর ঘুম হতে চায় না। এপাশ ওপাশ করি,
মেঘ গণনায় মনোযোগী হই, তবু পলাতক নিদ্রার
প্রত্যাবর্তনের নাম নেই। আজ জ্বালা ধরা চোখ দুটো
কচলাতে কচলাতে বিছানা ছেড়ে অন্ধকার উজিয়ে
আমার পড়ার ঘরে পা রাখি। স্যুইচ টিপে বাতি জ্বালাতেই
একলা সুনসান ঘরে নিজেকে কেমন অচেনা লাগে।

নিস্তব্ধতা একটা ঘোর কালো বাইসনের মতো যেন
চাপা ক্রোধে ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে। আমি-নই-অথচ আমি
চাবি দেয়া পুতুলের মতো হেঁটে যাই বুকশেলফের দিকে।
চেনা বইগুলোকে কখনও অচেনা, কখনও-বা ইটের সারি
মনে হচ্ছ। আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি? মাথার
শাদা চুলগুলো বেশ জোরে টানলাম, যেন
লুট-হয়ে যাওয়া সচেতনতাকে ফিরিয়ে আনার এই
নৈশ মুহূর্তে আমি প্রবল চেষ্টাশীল। সে গুড়ে
বালি ছড়িয়ে আড়াল থেকে কেউ আমাকে কখনও হুতোম প্যাঁচা
বানাচ্ছে, কখনও বাদুড়, আবার কখনও লেজঅলা ক্লাউন।

আমি যে একজন কবি, যার কবিতা দীক্ষিত পাঠকগণ
এখনও ভালবেসে পড়েন, এ-কথা কিছুতেই মনে
রাখতে দিচ্ছে না আড়ালে থাকা রহস্যময় সত্তা। আমি
ক্রমাগত গাড্ডায় পড়ে খাবি খাচ্ছি, কাঁটা-বিছানো
পথে হাঁটতে বাধ্য করা আমাকে, কখনও
ক্রূশে ঝুলিয়ে পেরেক ঠোকা হচ্ছে আমাকে কপালে,
বুকে, হাতে-পায়ে। আমি চোখে নক্ষত্রের ব্যালে-নৃত্য দেখছি
বলে ভাবছি। অথচ পিশাচের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি
চৌদিকে। পিপাসায় আমার বুক চৌচির, মুখের ভেতর
গিজগিজ করছে বালি। আমার কি নিস্তার নেই?

আমি কি পড়ার ঘরের চেয়ারে বসে ক্লান্তির ভারে
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম? চোখ মেলে দেখি, আমার ঘর
নীরবে পান করছে ভোরবেলার প্রথম আলোর শরবত।
আমার অন্তরে হাই তুলে মঞ্জরিত হল কবিতার পঙ্‌ক্তিমালা।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 140

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts