Poem

তিন যুবার গল্প

শামসুর রাহমান

যে-গল্প আমি বলতে যাচ্ছি
সেটি উঠে এসেছে আমার শৈশবের প্রাচীন
দিঘির তল আর
অশথ গাছের সবুজের গহনতা থেকে।
এঁ-গল্পের শুরু এবং শেষ, বলা যায়,
তিনজন যুবাকে করেছিলো নিয়ে,
যারা একদা যাত্রা করেছিলো এক সঙ্গে,
কিন্তু শেষ অব্দি ওরা তিনজন
চ’লে গেল তিন দিকে তেজী ঘোড়া ছুটিয়ে,
শরীরে বিস্তর ধুলো মেখে।

তাদের যাবার ধরন অনেকটা
স্যার গ্যালাহেডের মতো, চোখে-মুখে সংকল্প রেখায়িত,
হৃদয়ে নিবেদনের দ্যুতি।
লক্ষ্য ওদের অভিন্ন, অথচ ওরা
বেছে নিলো তিনটি আলাদা পথ। এখন
যা বলছি তা আগেই
বলা উচিত ছিলো। যাত্রা শুরু হবার আগে
এক সরোবর উগরে দিলো
ওদের উদ্দেশে হীরে-খচিত তলোয়ার,
সোনালি কুঠার আর মুক্তোর ঘুঙুর-পরা
বল্লম। নির্বাচন করতে হয় নি,
নিজে থেকেই
একেকটি অস্ত্র উঠে এলো একেক জনের হাতে।

দিন যায়, রাত যায়। ওদের ঘোড়া ছুটছে তো ছুটছেই
তিন দিকের তিন পথে, যদিও
গন্তব্য তাদের অভিন্ন।
লোকজন কান পেতে থাকে, জানতে চায় ওদের
ঘোড়ার পায়ের শব্দ কেমন ক’রে
মিলিয়ে যায় দিগস্ত থেকে দিগন্তে, আর
ওরা অপেক্ষা করে সেই দিনটির জন্যে
যে-দিন বন্দী হয়ে আছে ময়দানের লোমশ মুঠোয়।
তিন পরিত্রাতার প্রত্যাবর্তনের পথে
ওরা কান পেতে রাখে।

ওদের কানে আসে মুক্তোর ঘুঙুর-পার বল্লম
ডুবে গেছে ডোবায়,
সোনালি কুঠার হারিয়ে গেছে বনবাদাড়ে,
কেবল ওদের আশার মতো হীরে-খচিত তরবারি
ধাবমান ময়দানবের রাজ্যের দিকে। সেই তরবারির
ঝল কানি লেগে অন্ধ হয়েছে
ময়দানব, হুড়মুড় ক’রে ভেঙে পড়ছে ওর মায়াপুরী।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 95

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts