Poem

কখনো বারান্দা থেকে চমৎকার ডাগর গোলাপ
দেখে, কখনো-বা
ছায়ার প্রলেপ দেখে চৈত্রের দুপুরে
কিংবা দারুমূর্তি দেখে সিদ্ধার্থের শেলফ-এর ওপর
মনে করতাম,
যুদ্ধের বিপক্ষে আমি, আজীবন বড় শান্তিপ্রিয়।
যখন আমার ছোট্র মেয়ে
এক কোণে বসে
পুতুলকে সাজায় যতনে, হেসে ওঠে
ভালুকের নাচ দেখে, চালায় মোটর, রেলগাড়ি
ঘরময়, ভাবি,
যুদ্ধের বিপক্ষে আমি, আজীবন বড় শান্তিপ্রিয়।

যখন গৃহিণী সংসারের কাজ সেরে
অন্য সাজে রাত্রিবেলা পাশে এসে এলিয়ে পড়েন,
অতীতকে উস্‌কে দেন কেমন মাধুর্যে
অরব বচনাতীত, ভাবি-
যুদ্ধের বিপক্ষে আমি, আজীবন বড় শান্তিপ্রিয়।

আজন্ম যুদ্ধকে করি ঘৃণা।
অস্ত্রের ঝনঝনা
ধমনীর রক্তের ধারায়
ধরায়নি নেশা কোনো দিন।
যদিও ছিলেন পিতা সুদক্ষ শিকারি
নদীর কিনারে আর হাঁসময় বিলে,
মারিনি কখনো পাখি একটিও বাগিয়ে বন্দুকে

নৌকোর গলুই থেকে অথবা দাঁড়িয়ে
একগলা জলে। বাস্তবিক
কস্মিনকালেও আমি ছুঁইনি কার্তুজ।

গান্ধিবাদী নই, তবু হিংসাকে ডরাই
চিরদিন; বাধলে লড়াই কোনোখানে
বিষাদে নিমগ্ন হই। আজন্ম যুদ্ধকে করি ঘৃণা।
মারী আর মন্বন্তর লোকশ্রুত ঘোড়সওয়ারের
মতোই যুদ্ধের অনুগামী। আবালবৃদ্ধবনিতা
মৃত্যুর কন্দরে পড়ে গড়িয়ে গড়িয়ে
অবিরাম। মূল্যবোধ নামক বৃক্ষের
প্রাচীন শিকড় যায় ছিঁড়ে, ধ্বংস
চতুর্দিকে বাজায় দুন্দুভি।
আজন্ম যুদ্ধকে করি ঘৃণা।

বিষম দখলিকৃত এ ছিন্ন শহরে
পুত্রহীন বৃদ্ধ ভদ্রলোকটিকে জিজ্ঞেস করুন,
সৈনিক ধর্ষিতা তরুণীকে
জিজ্ঞেস করুন,
যন্ত্রণাজর্জর ঐ বাণীহীন বিমর্ষ কবিকে
জিজ্ঞেস করুন,
বাঙালি শবের স্তূপ দেখে দেখে যিনি
বিড়বিড় করছেন সারাক্ষণ, কখনো হাসিতে
কখনো কান্নায় পড়ছেন ভেঙে-তাকে
জিজ্ঞেস করুন,
দগ্ধ, স্তব্ধ পাড়ার নিঃসঙ্গ যে ছেলেটা
বুলেটের ঝড়ে
জননীকে হারিয়ে সম্প্রতি খাপছাড়া
ঘোরে ইতস্তত, তাকে জিজ্ঞেস করুন,
হায়, শান্তিপ্রিয় ভদ্রজন,
এখন বলবে তারা সমস্বরে, ষুদ্ধই উদ্ধার।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 234

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts