Poem

দুপুরে রোদ্দুরে

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

জ্যোৎস্নার মতো শীতের রোদ, বাসের হাতল ধরে আমি দাঁড়িয়ে
রইলাম, ঋজু, পকেটে পঞ্চাশ, হাওয়া, বুক খোলা, ডানহাতে বইগুলি–
একটা কালো কোটপরা লোক অত্যন্ত সহৃদয়ভাবে আমার পা মাড়িয়ে দিয়েই
একজন স্ত্রীলোকের বুকে টোকা মারলো, স্ত্রীলোকটির ঊরু পর্যন্ত
লাল মোজা, খুবই অন্যমনস্ক দুটি আগ্নেয়গিরি তার বুকে, কাচের
এপাশ থেকে তার মুখ অন্ধকারে নিহত সারিসের মতো, সে খুব
দুঃখিত স্বরে বললো, হ্যারিংটন (হু ওয়জ হ্যারিংটন?) স্ট্রট, মনে
হল সে সারা সকাল ধরে কেঁদোছে, কেননা তার চুর্ণ চুলে রোদ পড়েছিল, সে
আমাকে দেখতে পায়নি। অদূরে যে থ্যাঁতলানো পায়রাটাকে দেখে আমি
শিউরে
উঠেছিলাম, কালো কোটপরা লোকটির আড়াল থেকে সে তাও দেখতে পেল না
সে বললো, রোক্‌কে।
বাস অনেক দূর এসেছে, সে মরা পায়রাটাকে খুঁজে পাবে না।

রোকোকো কথাটা খুব সুন্দর। যেমন বুকলিক, কিন্তু প্যাস্টোরাল
নয়, একটা দীর্ঘনিশ্বাসের শব্দ তিনশো মাইল দূরে চলে গেল…
এখন হঠাৎ ময়দানে নেমে পড়লে আমি কি ফের রাখাল সেজে বাঁশী
বাজাতে পারবো? ‘ভালোবাসা ছিল ভালোবাসার অনেক আগে’—
লম্বা গাছের মাথার উপরে ক্রেন ঝুঁকে আছে, নিখিলেশ কথা বলছে একটা
মেয়ের সঙ্গে, মেয়েটা পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে, হাঁ করে মেয়েটা
নিজের শরীরে কথা ঢোকাচ্ছে, আমি চলে যাবার পর এক মুহূর্ত
ওরা চোখ বুজে ছিল, ঋষিদের মতো স্বভাবতই নিখিলেশ চোখ বন্ধ করে
থাকে।
অন্ধকারে লাল গোলাপ আমার ভালো লাগা চলবে না, কেননা
কমলবাবুর আগেই ভালো লেগেছে, কালো পোশাক ইয়েট্‌সের খুব পছন্দ
ছিল, তার চেয়েও খারাপ…দিনের আলোয় কেন ফুটেছিস সাদা ফুল?

ছাদের টবে পেচ্ছাব করেছিলাম, সেখানে তবু সুন্দর এক ঝাড় বেলফুল
ফুটেছে, না, লোকটা একটুর জন্য চাপা পড়লো না, আশ্চর্য, লোকটার
হাতে একটা ক্যালেন্ডার, ক্ষমা করুন, কে যেন বললো, না, কে যেন বললো,
দয়া করুন, ক্ষমা করুন, না, না, চোপরাও, না, না–অসম্ভব
এমন দয়াহীন, দয়াপ্রার্থী মানুষের বীজাণু আমার কানের মধ্য দিয়ে ঢুকে
যাক আমি চাই না। আমি বরং রোদ্দুরে একা।

Author Bio

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে

More

This post views is 122

Post Topics

Total Posts

1193 Published Posts