Poem

কাটামুণ্ডের দিবাস্বপ্ন

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

আঠাশ বছর কাটলো, মৃত্যুর এখনো দেরী একশো আঠাশ
নদীর ওপারে, শুকনো হাড়ের পাহাড়ে
সব বন্ধুদের ভাঙা কবরখানায় ফুলমালা দীর্ঘশ্বাস
দিয়ে যাবো, পৃথিবীর শেষ শোকসভায়
দেখাবো বিষম ভেল্কি একা বুনো হাড়ে।
হাওয়ায় উড়িয়ে যাবো পাণ্ডুলিপি, শতাব্দীর পাঁশুটে হাওয়ায়
সিগারেট টানতে হলে বইগুলো ছিঁড়ে
চমৎকার জ্বেলে নেবো, একটু বেশী ধোঁয়া হবে, তা হোক, শরীরে
ছারপোকার খুনোখুনি বন্ধ হবে তবুও অন্তত।
পৃথিবীর গাছগুলি সে-সময় পাতাহীন, ফুলহীন, কিন্তু আপাতত
জেনে নেওয়া যাক তবু, কে তুমি বকুল, শাল কিংবা দেবদারু
মনে রেখে তোমরা, ওহে স্থির
একদিন চরাচর অবশ্যই বিষম বধির
হয়ে যাবে, তখন কে আর কাব্য না খেয়ে না দেয়ে লিখবে
আমাদের মতো
অথবা বিরলে বসে পড়বে-শুনবে, দুঃখ পেতে যাবে।

এবং অস্থির গাছ লাল নীল হলুদ গোলাপী
কুমারী বা সদ্যোজায়া তোমাদের প্রতি ওষ্ঠ্যপুটে
জানাতে পারিনি প্রেম, কিংবা আহা, তোমাদের শরীরের প্রতি
অঙ্গ খুঁটে
এমন রূপের স্তোত্র আমরা ক’জন এই পুরাতন পাপী
ছাড়া আর কেবা লিখবে? কেবা দেবে অমরত্ব, আর কেউ দেবে না!
সতত সঞ্চারমানা আজো যারা, কোনোদিন দেখা হয়নি
গৌরী, কৃষ্ণা অথবা শ্যামলী
প্ৰলয়ের আগে শেষ কথা আমি বলি
ও মসৃণ শোভাগুলি মৃত্যু কিংবা বিবাহের আগে এসে
কবিতার ভিতরে লুকাও
ঠিকানা বা ফোটোগ্রাফ, অথবা অকুষ্ঠে চলে এসো সশরীরে
পৃথিবীর শেষতম কবির দু’চোখ ছুঁয়ে যাও!

Author Bio

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে

More

This post views is 140

Post Topics

Total Posts

1193 Published Posts