Poem

পাহাড় চূড়ায়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

অনেকদিন থেকেই
আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।
কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না।
যদি তার দেখা পেতাম, দামের জন্য আটকাতো না।
আমার নিজস্ব একটা নদী আছে,
সেটা দিয়ে দিতাম পাহাড়টার বদলে।
কে না জানে পাহাড়ের চেয়ে নদীর দামই বেশি।
পাহাড় স্থানু, নদী বহমান।
তবু আমি নদীর
বদলে পাহাড়ই কিনতাম।
কারণ আমি ঠকতে চাই।
নদীটাও অবশ্য আমি কিনেছিলাম একটা দ্বীপের বদলে।
ছেলেবেলায় আমার বেশ ছোট্টোখাট্টো ছিমছাম একটা দ্বীপ ছিল।
সেখানে অসংখ্য প্রজাপতি।
শৈশবে দ্বীপটি ছিল বড় প্রিয়।
আমার যৌবনে দ্বীপটি আমার কাছে মাপে ছোট লাগলো।
প্রবহমান ছিপছিপে তন্বী নদীটি বেশ পছন্দ হল আমার।
বন্ধুরা বললো, ঐটুকু একটা দ্বীপের বিনিময়ে এতবড় একটা নদী পেয়েছিস?
খুব তো জিতেছিস মাইরি।
তখন জয়ের আনন্দে আমি বিহ্বল হতাম।
তখন সত্যিই আমি ভালবাসতাম নদীটিকে।
নদী আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিত।
যেমন, বলো তো, আজ সন্ধেবেলা বৃষ্টি হবে কিনা?
সে বলতো, আজ এখানে দক্ষিণ গরম হাওয়া।
শুধু একটা ছোট্ট দ্বীপে বৃষ্টি, সে কী প্রবল বৃষ্টি, যেন একটা উৎসব।
আমি সেই দ্বীপে আর যেতে পারি না।
সে জানতো। সবাই জানে।
শৈশবে আর ফেরা যায় না।
এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই।
সে ই পাহাড়ের পায়ের কাছে থাকবে গহন অরণ্য,
আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাবো,
তারপর শুধু রুক্ষ কঠিন পাহাড়।
একেবারে চূড়ায়, মাথার খুব কাছে আকাশম নিচে বিপুলা পৃথিবী, চরাচরে তীব্র নির্জনতা।
আমার কষ্ঠস্বর সেখানে কেউ শুনতে পাবে না।
আমি ঈশ্বর মানি না, তিনি আমার মাথার কাছে ঝুঁকে দাঁড়াবেন না।
আমি শুধু দশ দিককে উদ্দেশ্য করে বলবো, প্রত্যেক মানুষই অহঙ্কারী,
এখানে আমি একা—এখানে আমার কোনো অহঙ্কার নেই।
এখানে জয়ী হবার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে।
হে দশ দিক, আমি কোনো দোষ করিনি।
আমাকে ক্ষমা করো ক্ষমা করো।

Author Bio

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে

More

This post views is 1407

Post Topics

Total Posts

1193 Published Posts